ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জ্বালিয়ে দেওয়া বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ও বঙ্গবন্ধু ভবন মঙ্গলবার ঘুরে দেখেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ | ছবিটি তার ফেরিফায়েড ফেইসবুক পেজের ভিডিও থেকে নেওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ও বঙ্গবন্ধু ভবনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ।

মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন পরিদর্শন শেষে ফেইসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজে দেওয়া ভিডিও বার্তায় তার বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি।

গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অসংখ্য ভাস্কর্য, স্থাপনা ও ভবনে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ভিডিও বার্তায় সোহেল তাজ বলেন, ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনের মধ্যে কিছু দুষ্কৃতকারী এই জঘন্যতম ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমি এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাই, অতিসত্বর এই দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ। এই পরিবারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক।

সোহেল তাজ বলেন, আমি দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাসার সামনে আমি। এটি বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ছিল। এই বাড়িতেই ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

বিবেকের তাড়নায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এসেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বিবেক দিয়ে পরিচালিত হই। আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি, আমার অবস্থান থেকে যতটুকু পারি করি। সেই আবেগের কারণেই আমি এখানে এসেছি। আমি এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না যে, আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, স্বাধীনতার প্রতীক বঙ্গবন্ধু; তাকে ইতিহাসের আলোকে এবং মোড়কে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর অসম্মানের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের আগের ২৩ বছরের গণআন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সোহেল তাজ বলেন, “আজ ছাত্র-জনতা যে আন্দোলন করেছে, তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। যেখানে সবার অধিকার নিশ্চিত করা হবে, যেখানে সবার বাকস্বাধীনতা থাকবে, যেখানে মেধাই হবে মাপকাঠি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই কিন্তু সেই চেতনা। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা এই আদর্শটাকে বাস্তবায়ন করতে পারিনি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যারা অবদান রেখেছেন, তাদের সবার অবদানকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার আহ্বান রেখে তিনি বলেন, "যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রেখে গেছেন, তাদের সবার অবদানকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা আবশ্যক। যেমন- হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জিয়াউর রহমানসহ ১১ জন সেক্টর কমান্ডার এবং আরও অনেক হিরো, নায়ক-মহানায়ক যারা আছেন, তাদের ইতিহাস আমাদের নজুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা দরকার।

সোহেল তাজ মনে করেন ইতিহাসের নায়কদের নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। তিনি বলেন, আমি মনে করি, এই চরিত্রদের নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক হবে না। আমাদের এই অ্যাসেট, যারা আমাদের লেগাসি, তাদের আমাদের সংরক্ষণ করে রাখতে হবে ন্যাশনাল অ্যাসেট হিসেবে। তাদের নিয়ে যাতে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে রাজনীতি না হয়, এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত।

শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সংরক্ষণ করায় তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে সোহেল তাজ বলেন, সবার প্রতি আহ্বান, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে দেশটাকে ভালোবাসতে হবে। আমি রাজনীতিতে নেই। আমিও চেষ্টা করছি আমার অবস্থান থেকে যতটুকু পারি বলার চেষ্টা করছি। রিমেম্বার, আমরা ‘মরাল কম্পাস’ যদি হারিয়ে ফেলি তাহলে কোনো জাতি কোনো দিনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।