আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বর এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিবেদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর নীলক্ষেত মোড় থেকে চলে যান তাঁরা।
এর আগে বিকেল চারটার পর থেকে দুই ঘণ্টার বেশি সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়।
পুলিশের বাধায় দুপুরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে গায়েবানা জানাজা পড়তে ব্যর্থ হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা পড়েন। জানাজা শেষে ক্যাম্পাসে কফিন নিয়ে মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের ওই মিছিলে একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁরা আবার সূর্য সেন হলের সামনে এসে জড়ো হন।
এরপর ঘণ্টাখানেক পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ চলে। পুলিশ সদস্যরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। অপর দিকে শিক্ষার্থীরা মাস্টারদা সূর্য সেন হলের সামনে অবস্থান নেন। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের জবাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন তাঁরা।
পুলিশের সঙ্গে টিকতে না পেরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ওই এলাকার হলগুলোর ভেতরে চলে যান শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে সূর্যসেন হলের সামনে এসে অবস্থান নেয় পুলিশ। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী সেখানে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ বন্ধ করে পুলিশ। তখন হলগুলো থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ের দিকে চলে যান। সেখানে তাঁরা অবস্থান নিলে পুলিশ আবারও তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। জবাবে শিক্ষার্থীরা পুলিশের দিকে ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করে। আধা ঘণ্টাখানেক পর সেখান থেকে চলে যান শিক্ষার্থীরা।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরুরি সভা বসে। ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি আজ সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে সব আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই ঘোষণার পর থেকেই হল ছাড়তে শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যখন হল ছেড়ে যান, তখন হলগুলো প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। যে কয়েকজন শিক্ষার্থী তখনো হলে ছিলেন, তাঁরাও বেরোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের জবাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বর এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বিকেলে শিক্ষার্থীদের মিছিলে কেন হামলা চালানো হলো, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ভিসির বাসভবন ও আশপাশের নিরাপত্তার স্বার্থে ভিসির অনুমতিক্রমে মিছিল ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে।
অপর দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গায়েবানা জানাজা শেষে তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল শুরু করেন। সেখানে পুলিশ হামলা চালায়।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের জন্য এই গায়েবানা জানাজা ও কফিনমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিচালনা করে আসা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এই কর্মসূচির নির্ধারিত স্থান ছিল রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে। পুলিশের বাধায় সেখানে যেতে পারেননি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এর আগে ঘটনাস্থল থেকে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ দুজনকে আটক করে পুলিশ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ আগেই আখতার হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন। কিন্তু টিএসসি এলাকায় যাওয়ার প্রতিটি প্রবেশপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান নেন।
সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আখতার হোসেনসহ আন্দোলনরত কয়েক শিক্ষার্থীর কথা-কাটাকাটি হয়। পুলিশ আখতার হোসেনকে আটকের চেষ্টা করে।
এ সময় সেখানে থাকা সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। কিন্তু পুলিশ সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের দিকে দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। দুটি ফাঁকা সাউন্ড গ্রেনেডও ছোড়া হয়। এ সময় চ্যানেল এসের সাংবাদিক সোলেয়মান আহত হন। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এরপর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি পালন করা হয়।
সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে আছেন বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
এর আগে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র ও জনতার ব্যানারে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি পালন করা হয়। সেখানে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন নিখিলসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। জানাজার পর ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা সেখানেই অবস্থান করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ দিয়ে বের হওয়ার সময় তাঁদের মুঠোফোন তল্লাশি করা এবং মারধর করতেও দেখা গেছে। বেলা তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে অন্তত তিনজনকে মারধর করা হয়। তাঁদের দুজনকে পুলিশ রক্ষা করে। একজন দৌড়ে শাহবাগ থানার মধ্যে ঢুকে যান।