উৎপাদন এলাকায় এবারও চোখ রাঙাচ্ছে কাঁচা মরিচ

মরিচখেতের পরিচর্যা করছেন এক কৃষক। মরিচগাছগুলো থেকে ফলন পাওয়া যাচ্ছে খুব কম। দুপুরে পাবনার সাঁথিয়ার ছেঁচানিয়া গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বেড়া: কাঁচা মরিচ উৎপাদনের দেশের অন্যতম এলাকা হিসেবে পরিচিত পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা। এই উপজেলাতেই কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে চলেছে। গতকাল শনিবার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার বিভিন্ন কাঁচা বাজারে খুচরা ৩৬০ টাকা কেজি দরে স্থানীয় (দেশি) কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে। তবে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম পাইকারি সবজি বিক্রির হাট সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুরহাটে কৃষকদেরকে এই মরিচই ব্যবসায়ীদের কাছে ৩০০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এদিকে কাঁচা মরিচের এমন দাম বেড়ে চলার পেছনে গত বছরের মতো এবারও ফলন বিপর্যয়কেই দায়ী করেছেন মরিচচাষি ও ব্যবসায়ীরা। গত বছরও প্রচণ্ড খরার কারণে কাঁচা মরিচের ফলন কম হয়েছিল। এর ফলে গত বছরের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে কাঁচা মরিচের দাম প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় উঠেছিল। চলতি বছরও মরিচ আবাদের শুরুর দিকে অর্থাৎ এপ্রিল, মে ও জুন মাসে প্রচণ্ড খরা ও গরমে মরিচগাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে এবারও কাঁচা মরিচের ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ফলে বাজারে মরিচ আসছে খুব কম। তাই দাম বাড়তে শুরু করেছে। কৃষকদের বক্তব্য, বাজারে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি করেও তাঁদের লাভ না হয়ে উল্টো লোকসান হচ্ছে।

গতকাল বেলা একটার দিকে উপজেলার ছেঁচানিয়া গ্রামের মরিচের খেতে গিয়ে কথা হয় মরিচচাষি মো. আলামিনের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার এক বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ২২ হাজার টাকা। অথচ এ পর্যন্ত তিনি মাত্র ১৯ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করতে পেরেছেন। মরিচের মৌসুম শেষ হয়ে আসায় আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই সব মরিচগাছ তুলে ফেলবেন। খেতে যে মরিচ আছে, তাতে এই দুই-তিন দিনে চার-পাঁচ কেজি মরিচ পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ।

সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাট পাইকারি কাঁচা মরিচ বিক্রির জন্য প্রসিদ্ধ। গতকাল বেলা ১১টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অল্প কয়েকজন কৃষক কাঁচা মরিচ বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন। তাঁদের কাছে কাঁচা মরিচের পরিমাণও বেশ কম (এক কেজি থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি)। এসব মরিচ ৩০০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।

গৌরীগ্রাম থেকে মরিচ নিয়ে আসা মরিচচাষি আবদুল জলিল বলেন, ‘কয়েক দিন পর আধা বিঘা জমির থ্যা মোটে পাঁচ কেজি মরিচ পাইছি। প্রতি কেজি মরিচ খ্যাতের থ্যা তুলতি ৩৫ টাকা খরচ দেওয়া লাগিছে। গত বছরের মতো এবারও মরিচের ফলন নাই। তাই বেশি দামেও আমাগরে লাভ না হয়া লস হতেছে।’

করমজা চতুরহাটের কাঁচামালের আড়তদার আবদুল খালেক জানান, হাটবার হওয়ায় এই হাটে সব মিলিয়ে অন্তত এক হাজার মরিচচাষির মরিচ নিয়ে আসার কথা। অথচ সারা দিনে ১০০ মরিচচাষি এসেছেন কি না সন্দেহ। তা ছাড়া স্বাভাবিক ফলনের সময় হাটের দিনে দেড় থেকে দুই হাজার মণ মরিচের আমদানি হওয়ার কথা। অথচ গতকাল সারা দিনে ৫০ মণ আমদানি হয়েছে কি না সন্দেহ।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার এ উপজেলায় ২ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। এবার ৬ হাজার ৩১৫ টন শুকনা মরিচ ও ২৫ হাজার ২৬০ টন কাঁচা মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সাঁথিয়ায় মরিচের আবাদ শুরু হয় হয় মার্চের শুরুতে। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত খেত থেকে মরিচ পাওয়া যায়। আর মে মাসের শুরু থেকে গাছে মরিচ আসতে শুরু করে। সেই হিসাবে এখন মরিচ মৌসুমের শেষ সময়।

পাবনা জেলার অন্যতম মরিচ ব্যবসায়ী রতন পাল বলেন, ‘গত বছরের চেয়েও এবার মরিচের ফলন কম হয়েছে। তবে ভারতের মরিচ আমদানি চলমান থাকায় এবার গত বছরের মতো তেমন দাম বাড়তে পারছে না। ভারতের মরিচ আমাদের এলাকায় এসে প্রতি কেজির দাম ২০০ টাকার কাছাকাছি (পাইকারি) পড়ছে। কিন্তু স্থানীয় কাঁচা মরিচ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা প্রতি কেজি।’

এদিকে গতকাল সাঁথিয়ার করমজা ও বেড়া পৌর এলাকার কাঁচা বাজারগুলোতে স্থানীয় (দেশি) কাঁচা মরিচ ৩৬০ টাকা ও ভারতীয় কাঁচা মরিচ ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, এখনো প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচ রয়ে গেছে। তবে মৌসুমের শেষ সময় বলে আগের তুলনায় এখন ফলন কম পাওয়া যাচ্ছে।