সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম | ফাইল ছবি
নিজস্ব প্রতিবেদক: সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেন মঙ্গলবার তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জবানবন্দিতে মোস্তাফিজুর বলেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম খুনের মামলার প্রধান আসামি শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে তাঁর ও আরেক আসামি ফয়সালের যোগাযোগ হয় গত মার্চে। বড় অঙ্কের অর্থ দেওয়ার কথা বলে তাঁদের ভারতে যেতে বলা হয়। ভারতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিটসহ সব কাজ করে দেওয়ার বিষয়ে শিমুল ভূঁইয়া আশ্বাস দেন। পাসপোর্ট করার জন্য শিমুল ভূঁইয়া টাকাও দেন। পরে গত ১৫ এপ্রিল মোস্তাফিজ ও ফয়সাল ঢাকায় এসে হত্যাকাণ্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামানের বসুন্ধরার বাসায় ওঠেন। এরপর ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁরা ওই বাসায় অবস্থান করেন।
জবানবন্দির তথ্য অনুযায়ী, আক্তারুজ্জামানের ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দেওয়া আরেক আসামি সিয়ামের মাধ্যমে ভারতের ভিসার ব্যবস্থা করা হয়। ভিসা পাওয়ার পর আক্তারুজ্জামানের পরিকল্পনায় গত ২ মে তাঁরা ভারতে যান। পরে কলকাতার নিউমার্কেটের একটি হোটেলে গিয়ে ওঠেন। এরপর ১০ মে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনসের বাসায় ওঠেন। পরে আনোয়ারুল আজীম সেখানে আসার পর শিমুল ভূঁইয়ার নেতৃত্বে মোস্তাফিজ, জিহাদ ও ফয়সালসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন তাঁকে অজ্ঞান করে খুন করেন। হত্যাকাণ্ড শেষ হওয়ার পর ১৯ মে কলকাতা থেকে তাঁরা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। পরে তাঁরা আক্তারুজ্জামানের বসুন্ধরার বাসায় অবস্থান করেন। এরপর আনোয়ারুল আজীম খুন হওয়ার তথ্য জানাজানি হওয়ার পর মোস্তাফিজ ও ফয়সাল আত্মগোপনে চলে যান। ভুলে তাঁরা আক্তারুজ্জামানের বসুন্ধরার বাসায় পাসপোর্ট রেখে যান।
গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম। সংসদ সদস্য খুনে মোস্তাফিজুর ও ফয়সালের ভূমিকা নিয়ে ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আনোয়ারুল আজীমকে অচেতন করতে তাঁর ওপর চেতনানাশক ব্যবহার করেছিলেন ফয়সাল। অন্যদিকে খুনের আগে আনোয়ারুলকে চেয়ারে বেঁধে ফেলার কাজটি যাঁরা করেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মোস্তাফিজুরও। চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা থেকে মোস্তাফিজুর ও ফয়সালকে গত বুধবার বিকেলে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাঁদের তথ্য অনুযায়ী, ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে পাহাড়ের পাতাল কালীমন্দিরে ২৩ দিন আত্মগোপনে ছিলেন ওই দুজন। মন্দিরের লোকজনের কাছে মোস্তাফিজ নিজের পরিচয় দেন শিমুল রায় নামে। ফয়সালের পরিচয় ছিল পলাশ রায়। পাতাল কালীমন্দির এলাকা থেকে দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। পরদিন তাঁদের ছয় দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত।
কলকাতা পুলিশ সূত্র জানায়, যেদিন আনোয়ারুল খুন হন, সেদিন বেলা ১টা ৪০ মিনিটে কলকাতার বরাহনগরের মণ্ডলপাড়া লেনের বন্ধুর বাসা থেকে বের হয়ে একটি গাড়িতে ওঠেন তিনি। ওই গাড়িতে আগে থেকেই ছিলেন ফয়সাল। তিনি সংসদ সদস্যকে নিয়ে নিউ টাউন এলাকার ‘অ্যাক্সিস মল’-এর কাছে যান। বেলা ২টা ৪০ মিনিটে দুজনই গাড়িটি থেকে নেমে অন্য আরেকটি গাড়িতে ওঠেন। তখন তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হন শিমুল ভূঁইয়া। দ্বিতীয় যে গাড়িতে আনোয়ারুল উঠেছিলেন, সেই গাড়ি মোস্তাফিজুরকে নিয়ে ভাড়া করেছিলেন ফয়সাল। এই তিনজন (আনোয়ারুল, মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল) বেলা ৩টা ৫ মিনিটে নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনসে যান। পরে তাঁরা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। এই ফ্ল্যাটে খুন হন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল।
সংসদ সদস্য খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী চরমপন্থী নেতা শিমুল ভূঁইয়া, তাঁর ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও খুনের সময় কলকাতায় অবস্থান করা আরেক নারী শিলাস্তি রহমান আগেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। এবার গ্রেপ্তার হলেন মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল। দুজনের বাড়ি খুলনার ফুলতলায়। শিমুলের বাড়িও একই এলাকায়। খুনের এ ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম (মিন্টু) এবং একই কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদকেও গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। সাইদুল করিম ছাড়া প্রত্যেকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৯ জন গ্রেপ্তার হলেন। এর মধ্যে ভারতে আছেন দুজন।