হেলমেট পরিহিত ছাত্রলীগের দুজন নেতা-কর্মী বস্তায় ভরে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের চার নেতাকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার বিকেল ৬টা ২০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে বিকেল পাঁচটার দিকে কোটা আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁদের বিভিন্ন হল থেকে বস্তায় করে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এদিকে চার নেতার ওপর হামলার প্রতিবাদে রাতে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেছেন প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতারা। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের এক জোট হয়ে মোটরসাইকেল মহড়া দিতে দেখা যায়।
হামলায় আহত চার নেতা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ, ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকার, ছাত্র ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব হাসান ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল।
ছাত্রলীগের হামলায় আহত নেতা তারেক আশরাফ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
অন্যদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মনু মোহন বাপ্পা, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রিন্স হোসেন রাঈলসহ কয়েক নেতা-কর্মী। ভুক্তভোগীরা সুনির্দিষ্ট করে তাঁদের নাম বলতে পারেননি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতারা এক জোট হয়ে বিকেলে ক্যাম্পাসে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। তাঁরা ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের সামনে গেলে হঠাৎ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মোটরসাইকেলে এসে তাঁদের মারধর শুরু করেন। এ সময় তাঁদের দ্রুত ক্যাম্পাস থেকে হলে চলে যেতে বলা হয় বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
আহত তারেক আশরাফ বলেন, ‘আজ আমাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। আমরা বিকেলে ক্যাম্পাসে হাঁটাহাঁটি করছিলাম। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাইকে এসে আমাদের ওপর হামলা করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আমাদের সম্মতি থাকলেও আমরা সরাসরি যুক্ত নই। তাহলে আমাদের ওপর হামলা করল কেন?’ ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকার বলেন, ‘এই তোরা কারা? এখানে কী? হলে যা’ বলেই মারধর করতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
তবে ছাত্রলীগ নেতা মনু মোহন বাপ্পা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এ রকম কোনো বিষয়ে আমার জানা নেই।’ এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে ছাত্রলীগের কে বা কারা হামলা চালিয়েছে, এখনো জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’
ছাত্রলীগের বিক্ষোভ ও সশস্ত্র অবস্থান
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়ে বিকেলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বিকেল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে ছাত্রলীগের দলীয় টেন্ট থেকে মিছিল বের করে আবার সেখানে ফিরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হন নেতা-কর্মীরা।
সমাবেশে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সর্বোচ্চ ভদ্রতা দেখিয়েছে। সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা আর একবার রাজাকার বলে স্লোগান দিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আর ছাড় দেবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ছাত্রলীগ কাজ করছে এবং করবে।’
সমাবেশ শেষে টুকিটাকি চত্বরে অবস্থান নেন নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁদের বিভিন্ন হল থেকে বস্তায় করে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ‘এমনটি হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’
হামলার প্রতিবাদে মশাল মিছিল
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মশালমিছিল হয়। সোমবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের কাছে আমতলা চত্বরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
পরে মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় নেতা-কর্মীরা সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। হামলার বিচার না করলে কাল মঙ্গলবার প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি দেন।