কোটা আন্দোলনে বগুড়ায় সহিংস ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বৃহস্পতিবার বিকেলে বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিকে সহযোগিতা করার জন্য সেনাবাহিনীকেও মাঠে নামানো হয়েছে। সান্ধ্য আইন (কারফিউ) জারি করা হয়েছে। ধীরে ধীরে দেশ নরমালাইজড (স্বাভাবিক) হচ্ছে। খুব শিগগির আমরা নরমাল লাইফে (স্বাভাবিক জীবনে) ফিরতে পারব।’

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায় বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে আসাদুজ্জামান খান এ কথা বলেন। এর আগে তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পরিদর্শন করেন এবং বগুড়া জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলন হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী কোটা বিলুপ্ত করেছিলেন। সংক্ষুব্ধ হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার দুই সন্তান হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আদেশ দেন, পুনরায় কোটা চালু হবে। এতে শিক্ষার্থীরা সংক্ষুব্ধ হয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী তখন বিদেশ যাচ্ছিলেন, তিনি নির্দেশনা দেন, ‘আমি দেশে ফিরি। বিচার বিভাগ স্বাধীন। তাঁরা যেন বিচার বিভাগে গিয়েই হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।’ আপিল না করে তাঁরা শুরু করে দিলেন আন্দোলন। দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হলো। পরে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চ বসে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা রেখে রায় ঘোষণা করা হলো।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা যাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের সন্তানের বয়স ৩০ বছর পার হয়ে গেছে। সেই অর্থে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো কোটা নেই। ৯৮ শতাংশই এখন মেধা।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, রায়ের পর কোটা আন্দোলনকারীরা প্রধান বিচারপতি ও সরকারকে ধন্যবাদ দেওয়ার কথা। কিন্তু ইতিমধ্যে অনেক জল গড়িয়েছে। এই কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করে যারা বাংলাদেশ চায়নি, যারা জঙ্গির উত্থান ঘটিয়েছিল, যারা সব সময়ই বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর দেশে পরিচিত করতে চেয়েছিল—সেসব দল একত্র হয়ে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। সেই ধ্বংসলীলা থেকে বগুড়াও বাদ যায়নি। বগুড়ায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ এখানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই ইস্যুতে মাঠেই নামেননি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির ম্যুরালের ওপর তাদের রাগ-ক্ষোভ। আওয়ামী লীগ অফিস, জাসদের অফিস, থানা ভবন, ভূমি অফিস, জাজেস কমপ্লেক্সে ভাঙচুর করা হয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র তুলে ধরে আসাদুজ্জামান খান বলেন, সেতু ভবন, ত্রাণ অধিদপ্তর, বিটিভি, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নানা জায়গা পুড়িয়ে দিয়ে তারা দেশকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছিল। নরসিংদীর কারাগারে হামলা করে জঙ্গিদের মুক্ত করেছে। যারা একাত্তর সালে স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি, যারা বাংলাদেশের ক্রমাগত উন্নয়নকে দমিয়ে রাখতে চায়, তারাই মূলত কোটা আন্দোলনের নামে বাংলাদেশকে অকার্যকর করতে চেয়েছিল।

আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, রংপুরে শুধু একজন ছাত্র শাহাদাত বরণ করেননি, তিনজন পুলিশ, একজন আনসার সদস্য শাহাদাত বরণ করেছেন। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শাহাদাত বরণ করেছেন। যেখানেই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, সেখানেই তারা আক্রমণ করেছে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, ‘যেহেতু সব দাবি মানা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আপনাদের বাকি দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে বিবেচনা করবেন ও ব্যবস্থা নেবেন। ইতিমধ্যেই একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারা নিরপেক্ষভাবে ঘটনাগুলো তদন্ত করবে।’