নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো আজ সোমবার বিকেল থেকে অচল হয়ে পড়েছে রাজধানীর বড় অংশ। গুলিস্তান, শাহবাগ, ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়েছেন। এতে কোনো গাড়ি চলতে পারছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অফিস শেষে ঘরমুখী মানুষ। অন্য যাত্রীরাও সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এক জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের পথ ধরছেন যাত্রীরা। এতে অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের পড়তে হচ্ছে বেকায়দায়। এমনই একটি চিত্র দেখা গেছে বিকেলে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায়। আমেনা বেগম নামের ষাটোর্ধ্ব এক নারী ট্রান্স সিলভা পরিবহনের একটি বাসে করে মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী যাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে দুটি বড় ব্যাগ ছিল। তিনি আধা ঘণ্টা ধরে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে বসে ছিলেন। যানজটের কারণে অন্য সব যাত্রী বাস থেকে নেমে হাঁটা ধরেন। একপর্যায়ে ওই নারীও বাস থেকে নেমে যান। দুটি ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে তাঁর কষ্ট হচ্ছিল। সেখানে তিনি কান্না জুড়ে দিলে কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে তাঁকে নীলক্ষেত মোড়ে নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে দেন।
ওই মোড়ের কাছে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রান্স সিলভা পরিবহনের একটি বাসের চালক সাগর খান বলেন, যাত্রাবাড়ী যাওয়ার পথে এখানে দেড় ঘন্টার বেশি সময় ধরে আটকে আছেন। সব যাত্রী নেমে হেঁটে রওনা দিয়েছেন।
বিকেল চারটার দিকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। এতে মিরপুর সড়ক ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে শাহবাগ যাওয়ার সড়ক কার্যত অচল হয়ে যায়। সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, শুধু রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া আর কোনো যানবাহন ছাড়ছেন না আন্দোলনকারীরা।
কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করায় পাশের সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে এসব গাড়ি। আজ সোমবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলন করছেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বিকেল চারটার পর সায়েন্স ল্যাব মোড় ছাড়াও রাজধানীর শাহবাগ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড়, মিন্টো রোড, মৎস্য ভবন, গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট, বঙ্গবাজার মোড়, চানখাঁরপুল, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।
আন্দোলনকারীরা মোড়গুলোতে অবস্থান নেওয়ায় আশপাশের সড়কগুলোতে থাকা গাড়িগুলো আটকে যায়। সেগুলোর সামনে–পেছনে যাওয়ার সুযোগ নেই। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শাহবাগ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সড়কে দেখা যায়, প্রতিটি মোড় অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারীরা। কেবল অ্যাম্বুলেন্স ও গণমাধ্যমের গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন তাঁরা চলতে দিচ্ছেন না।
যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসেবে অনেকে মেট্রোরেল ব্যবহার করেন। শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় মেট্রো স্টেশনগুলোতে অনেক বেশি মানুষের ভিড়। স্টেশনেও টিকিটের জন্য ছিল দীর্ঘ লাইন। টিকিট কেটে ট্রেনের জন্য প্ল্যাটফর্মেও ছিল মানুষের ভিড়। সাধারণত ট্রেন এলে একবারেই স্টেশনে থাকা সব যাত্রী উঠতে পারলেও আজ বিকেলে যাত্রীদের লাইনে দাঁড়িয়ে দু–তিনটি ট্রেন যাওয়ার পর ওঠা সম্ভব হয়েছে। ট্রেনের ভেতরেও দেখা যায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা বিকেল থেকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট অবরোধ করে আছেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সড়ক অবরোধ করে ফুটবল খেলেন শিক্ষার্থীরা
কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিকেলে গুলিস্তানের নূর হোসেন চত্বরে অবস্থান নেন। তাঁদের একটি দল ফাঁকা সড়কে ফুটবল খেলা শুরু করে।
এদিকে সড়ক বন্ধ থাকায় আশপাশে তীব্র যানজট দেখা দেয়। যানবাহন থেকে যাত্রীরা নেমে হাঁটতে শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের অবরোধে সাধারণ পথচারীদেরও চত্বরটি দিয়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়। ফলে অনেক পথযাত্রী বিরক্ত হয়ে পড়েন। এ পরিস্থিতিতে সড়কে আন্দোলনকারীদের ফুটবল খেলা নিয়ে সমালোচনা হলে শিক্ষার্থীরা বলটি সরিয়ে নেন। জানতে চাইলে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বলটি কে এনেছে, জানি না। তবে বিষয়টি দৃষ্টিকটূ। তাই আমরা সড়কে খেলতে নিষেধ করেছি।’
কোটাবিরোধী আন্দোলনের কারণে সড়ক বন্ধ থাকায় এক পাশে আটকে আছে গাড়ি। রাস্তার অন্য পাশ দিয়ে হেঁটে গন্তব্যের পথে মানুষ। আজ সোমবার বিকেলে খামারবাড়ি এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
স্বাভাবিক সময়েও পুরান ঢাকায় যানজটের ভোগান্তি থাকে। সেখানে সড়ক আটকে যাওয়ায় দুর্ভোগ অন্য মাত্রা নেয়। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জরুরি কাজে গিয়েছিলেন সেলিম আনোয়ার। কাজ শেষ করে বিকেলে কোনো যানবাহন না পেয়ে হেঁটেই গুলিস্তান মোড় পার হন তিনি।
গুলিস্তান মোড়ে সেলিম আনোয়ার বলেন, ‘বের হওয়ার পর সড়কজুড়ে শুধু যানবাহন আটকে ছিল। তাই কোনো গাড়ি বা রিকশা পাইনি। যেতে হবে গাবতলী। তাই যত দূর সম্ভব হেঁটে যাচ্ছি।’
সদরঘাট থেকে গাজীপুর রুটে চলাচলকারী আজমেরী পরিবহনের একটি বাসের চালক আজগর আলী বলেন, ‘বিকেলের পর যানজট শুরু হয়েছে। বাধ্য হয়ে যাত্রীদের নেমে যেতে অনুরোধ করেছি।’