আজ শুক্রবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে নিহত চারজনের একসঙ্গে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে আজমপুর কবরস্থানে একই সঙ্গে তাঁদের দাফন করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রাইভেট কার দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচজনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা পৌনে তিনটায় একই গ্রামের চারজনের একসঙ্গে জানাজা হয়। আরেকজনের জানাজা পাশের গ্রামে হয়েছে। জানাজা শেষে চারজনকে একই কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার ও ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খাঁন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাত বন্ধু মিলে প্রাইভেট কারে বেড়াতে বের হয়েছিলেন। বেড়ানো শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া এলাকায় পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কে প্রাইভেট কারটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে ঘটনাস্থলে তিনজন ও হাসপাতালে নেওয়ার পর দুজনের মৃত্যু হয়। বাকি দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানাজার আগে কথা বলছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিহত ব্যক্তিরা হলেন আজমপুর গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে জিহাদ হোসেন (২৫), ইলিয়াস হোসেনের ছেলে সিয়াম হোসেন (২৩), মাসুম হোসেনের ছেলে শিশির ইসলাম (২২), আনোয়ার হোসেনের ছেলে বিজয় হোসেন (২৫) ও ভারইমারি গ্রামের ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে শাওন হোসেন (২৪)। তাঁদের মধ্যে বিজয় হোসেন প্রাইভেট কারটির চালক ছিলেন। বাকি চারজন ঈশ্বরদী টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের ছাত্র।
নিহত ৫ তরুণ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আজ সকালে সরেজমিনে গ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়, লাশের অপেক্ষায় স্বজনেরা। চার বাড়িতেই চলছে মাতম। কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পুরো গ্রাম। প্রতিবেশীরা এসে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্বজনদের। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিহত ব্যক্তিদের লাশ এসে পৌঁছায় গ্রামটিতে। কান্নায় আরও ভারী হয় গ্রামের পরিবেশ। বেলা পৌনে তিনটার দিকে তাঁদের চারজনের একসঙ্গে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে আজমপুর কবরস্থানে একই সঙ্গে তাঁদের দাফন করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্ঘটনার দিন সন্ধ্যায় চারজনকে গ্রামে দেখা গেছে। তাঁরা গ্রামেই ঘুরছিলেন। কিছুক্ষণ পর দুর্ঘটনার খবর আসে।
ঈশ্বরদী পোল্ট্রি খামার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় পদকপ্রাপ্ত খামারি আকমল হোসেন জানান, চালক বিজয় হোসেন ঢাকায় উবারের গাড়ি চালান। গতকাল তিনি গাড়ি নিয়ে বাড়িতে আসেন। এরপর বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে বের হন। ঘোড়াফেরা শেষে বাড়ি ফেরার পথে তাঁদের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারায়।
আকমল হোসেন বলেন, পাঁচ বন্ধু একসঙ্গে চলতেন। একসঙ্গেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। একই স্থানে তাঁদের চারজনের দাফন হয়েছে। একজনের বাড়ি দূরে হওয়ায় তাঁকে আলাদাভাবে দাফন করা হয়েছে।
নিহত জিহাদের বাবা রেজাউল ইসলাম জানান, সন্ধ্যার পর তাঁর ছেলে বাড়িতেই ছিলেন। হঠাৎ এক বন্ধু এসে বাড়ির বাইরে ডেকে নিয়ে যান। বাড়ি থেকে বের হওয়ার এক ঘণ্টা পরই খবর আসে, জিহাদ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
স্বজনদের বুকফাটা আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার বাতাস | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রেজাউল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এ মৃত্যু সবের পারতেছি না। আমার বুকটা খালি হয়ে গেল।’
গ্রামের বাসিন্দা দুলাল হোসেন বলেন, ‘নিহত পাঁচজনই বন্ধু ছিল। তাদের চারজনের বাড়ি পাশাপাশি। এমন মৃত্যুতে আমরা হতবাক হয়েছি।’
জানতে চাইলে ঈশ্বরদী থানার পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম জানান, নিহত পাঁচজনসহ মোট সাতজন গাড়িতে ছিলেন। তাঁরা সবাই পরস্পর বন্ধু। ঘটনার সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। রাস্তা বেশ ভেজা ছিল। প্রাইভেট কারটিও একটু বেশি গতিতে চলছিল। ঘটনাস্থলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে কারটি রাস্তার পাশে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে কারটি দুমড়েমুচড়ে ঘটনাস্থলেই তিনজন ও পরে দুজন মারা যান। বাকি দুজনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন
ঈশ্বরদীতে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা, ৫ বন্ধু নিহত |