যমুনা নদীর পানির তোড়ে এভাবেই ভেঙে পড়েছে মুজিব কিল্লার একাংশ। ১৬ জুলাই সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চর গিরিশ ইউনিয়নে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জ: নির্মাণ শেষ হতে না হতেই যমুনা নদীর পানির তোড়ে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মুজিব কিল্লার একাংশ ভেঙে পড়েছে। উপজেলার চর গিরিশ ইউনিয়নে কিল্লাটি নির্মাণ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। ৫ জুলাই পানির তোড়ে মুজিব কিল্লার একাংশ ভেঙে পড়ে। পরের দিন প্রকল্প পরিচালক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

আসছে আগস্ট মাসে আবারও যমুনা নদীতে পানি বাড়ার আশঙ্কা আছে। এ অবস্থায় দুর্গত এলাকার মানুষ, গরু-ছাগল ও মূল্যবান জিনিসপত্র সংরক্ষণের জন্য নির্মিত এই মুজিব কিল্লা আদৌ টিকবে কি না, তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে। দুই কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে কিল্লাটি নির্মাণ করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, এলাকার পানিনিষ্কাশনের একমাত্র কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় যমুনা নদীর পানির বেগ বেড়ে যায়। একপর্যায়ে রাস্তা ভেঙে পানি বের হয়ে গেছে। এ সময় নতুন মাটির ওপরে নির্মিত মুজিব কিল্লা ভবনের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। ফলে স্থাপনাটির একাংশ ভেঙে পড়েছে।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মুজিব কিল্লার প্রকল্প পরিচালক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, কিল্লাটি সেখানে টিকবে কি না, তা যাচাই করার জন্য তিন সদস্যের একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগস্ট মাসের দিকে এ কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কী করা হবে? তবে তাঁর ব্যক্তিগত ধারণা, প্রকল্পটি ঠিক জায়গাতেই করা হয়েছে এবং ভেরিয়েশন করলে টিকেও যাবে। তিনিও মনে করেন, কালভার্ট বন্ধ করে দেওয়ার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর একেবারে নতুন মাটির ওপরে কিল্লা নির্মাণ করা হয়েছে। এ মাটি এখনো কমপ্যাক্ট (দৃঢ়-সুবিন্যস্ত) হয়নি। মাটি ধরে রাখার প্রটেকশনটাও ঠিকমতো দেওয়া হয়নি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এটির নাম ‘ছালাল-নাসিমনগর বাজার মুজিব কিল্লা’। কাজীপুর উপজেলার চর গিরিশ ইউনিয়নের ছালাল ও চর ডগলাস মৌজার মাঝখানে পড়েছে। ডগলাসেই নাসিমনগর বাজার। ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল কিল্লার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। চলতি জুলাই মাসে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। কাজটি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সজীব কনস্ট্রাকশন।

ভেঙে গেছে মুজিব কিল্লা ভবনের একাংশ। ১৬ জুলাই সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চর গিরিশ ইউনিয়নে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মো. রিপন মিয়ার দাবি, তাঁরা ৮০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ করে ফেলেছিলেন। এ অবস্থায় পানির তোড়ে কিল্লার একাংশ ভেঙে পড়েছে। তাঁরা মূল মাটির এক ফুট নিচ থেকেই পিলার তুলেছেন। কিন্তু পানির প্রবল স্রোতের কারণে মূল মাটিও সরে গেছে।

স্থানীয় চর গিরিশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, মূল মাটি থেকে পিলার তোলা হলে নতুন মাটি স্রোতে সরে গেলেও ঘর ভাঙত না। আলগা মাটির ওপরে স্থাপনা করার কারণে স্রোতে মাটি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘর দেবে গেছে। তিনি আরও বলেন, ছালাল, চর ডগলাস, ভেটুয়া ও সিন্দুরআটা—এই চার মৌজার মাঝখানে কিল্লা স্থাপন করা হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ দুর্যোগের সময় উপকৃত হবেন।

১৬ জুলাই বিকেলে কাজীপুর উপজেলার সদর থেকে স্পিডবোটে প্রায় এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে চর ডগলাসে মুজিব কিল্লা পাওয়া যায়। কিল্লার পূর্ব পাশের অংশ ভেঙে পড়েছে। প্রবল স্রোতের কারণে ভবনের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দেখে মনে হলো। দেবে যাওয়া অংশের ভেতরে দেয়াল ফেটে ভেঙে পড়েছে।

পানির তোড়ে মুজিব কিল্লা ভবনের একাংশ ভেঙে গেছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুজিব কিল্লার পূর্ব পাশে নদীর পানিনিষ্কাশনের জন্য একটি কালভার্ট আছে। এটি দুই বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কালভার্টটির উত্তর পাশের জায়গা ভরাট করে ডগলাস-ভেটুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান আলী বললেন, যমুনার ভাঙনে বিদ্যালয়টি পাঁচবার সরিয়ে বর্তমান জায়গায় আনা হয়েছে। বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী আছে ৮৪ জন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এটি বি-টাইপের স্থাপনা। আয়তন ৯ হাজার ৩০০ বর্গফুট। প্রকল্পের নাম ‘মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’। উদ্দেশ্য, দুর্যোগকবলিত এলাকার জনসাধারণ ও তাঁদের পরিবারের জীবন রক্ষা, মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী নিরাপদে সংরক্ষণ এবং দুর্যোগে আক্রান্ত গৃহপালিত প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা। স্বাভাবিক সময়ে এর বহুমুখী ব্যবহার করা যাবে। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা; খেলার মাঠ ও হাটবাজার হিসেবে ব্যবহার করা; কমিউনিটির উন্নয়নের লক্ষ্যে বৈঠক-সভার আয়োজন করা; প্রশিক্ষণকেন্দ্রের স্থান ও অস্থায়ী সেবাকেন্দ্র হিসেবে এটি ব্যবহারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

কাজীপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এ কে এম শাহ আলম মোল্লা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এর ভেতরে গরু-ছাগল এবং এর মালিকদের থাকা-খাওয়া, প্রস্রাব-পায়খানা ও গোসলের ব্যবস্থা আছে। নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে।