রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | ফাইল ছবি

প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ আনা শিক্ষার্থী মোস্তফা মিয়া নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নিরাপত্তা না পেলে তিনি ক্যাম্পাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন। এদিকে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় গত মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে নিয়ে মোস্তফাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও তাঁর কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে। ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে মারধরের পর ওই ছাত্রকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে নিরাপত্তা চেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তফা মিয়া।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফরহাদ হোসেন খান ও নবাব আবদুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা।

মোস্তফা মিয়া শুক্রবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার শরীরের পশ্চাৎ অংশে, পায়ে, হাতে, কোমরে ও মুখে তাঁরা মারধর করেছেন। ছাত্রলীগ সভাপতি বাবু (মোস্তাফিজুর রহমান) আমাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন। বাকিরা চারপাশ ঘিরে হাত দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে কিল-ঘুষি দিয়েছেন। শরীরে এখনো অনেক ব্যথা আছে। পরিবারের কাউকে এখনো জানাইনি। তবে নিউজ হওয়ার পর এলাকার অনেকেই জেনেছেন।’

মোস্তফা মিয়া বলেন, এ ঘটনার পর তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যতক্ষণ না নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে, ততক্ষণ তিনি ক্যাম্পাসে ফিরবেন না। ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা তাঁকে ‘টার্গেটে’ রেখেছেন। তখনই বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আরও নির্যাতন করবেন কি না, তিনি শঙ্কিত। মারধরের ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য ছাত্রলীগের নেতারা মুখ বন্ধের অনেক চেষ্টা করেছেন। গতকাল গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর এক নেতার মাধ্যমে ফোন করে ছাত্রলীগের সভাপতি কথা বলতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তিনি ফোন কেটে দিয়েছেন।

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেছিলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত নই। কিছুক্ষণ আগেই শুনলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তারপর বলতে পারব।’ এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বলে দাবি আরেক অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতা ফরহাদ হোসেন খানের।

এদিকে ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তর থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রক্টর আসাবুল হক বলেন, অভিযোগের ঘটনায় সহকারী প্রক্টর জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা কাজ শুরু করেছেন।

সহকারী প্রক্টর জাকির হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। ওই শিক্ষার্থী বাড়ি ফিরে গেছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তেমন কিছু জানা যায়নি। কাল অথবা পরশু অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অভিযোগের প্রমাণ পেলে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লিখিত অভিযোগে ওই শিক্ষার্থী দাবি করেছেন, মঙ্গলবার ছাত্রলীগের সভাপতির কক্ষে যাওয়ার পর মোস্তফা মিয়াকে শিবির আখ্যা দিয়ে তাঁর ফোন তল্লাশি করতে শুরু করেন মোস্তাফিজুর রহমান। ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দেখে রেগে যান ছাত্রলীগের সভাপতি। একই সঙ্গে আন্দোলনে যাওয়ার কারণে তাঁকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন তিনি। এ সময় তিনি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বলেন, ‘তুই শিবির করিস, স্বীকার কর।’ দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাঁকে নির্যাতন করেন ছাত্রলীগের নেতারা।