সানজিদা খাতুন | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি শেরপুর: কোটা আন্দোলনের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার (২৩) বগুড়ায় বাড়িতে ফিরছিলেন বাসে করে। পথে তাঁদের বাসটি ছিনতাই হয়। তখন বাঁচতে চলন্ত বাস থেকে ঝাঁপ দেন তিনি। এতে আঘাত পেয়ে তিনি মারা যান।

শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর বাজার এলাকার সামনে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সানজিদা ঢাকায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এআইইউবি) বিবিএ তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন।

বগুড়া উপশহর এলাকার ব্যবসায়ী আবদুর রউফের মেয়ে সানজিদা। সানজিদার ছোট ভাই তানভীর রহমান বলেন, ঢাকায় কোটাবিরোধী চলমান আন্দোলনকে ঘিরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আজ সকালে সানজিদা শাহ ফতেহ আলী বাসযোগে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। বোনের সঙ্গে তাঁদের মুঠোফোনে যোগাযোগ হচ্ছিল।

বাসটি বেলা পৌনে ১১টায় ফুড ভিলেজে যাত্রাবিরতির নেয়। অন্যরা নেমে গেলেও বাসে সানজিদাসহ চারজন নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর পুরুষ যাত্রীটি বাসটি ফুড ভিলেজ থেকে বের করে বগুড়ার দিকে চালিয়ে নিয়ে যান। সানজিদা মুঠোফোনে বিষয়টি তাঁদের জানায়। এর কিছুক্ষণ পর থেকে তাঁরা আর সানজিদার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।

শাহ ফতেহ আলী বাসের চালক নাজিরুল মোল্লা বলেন, ঢাকা থেকে বগুড়ায় যাওয়ার সময় তাঁর বাসে ৩৩ জন যাত্রী ছিলেন। ফুড ভিলেজে বেলা পৌনে ১১টায় তাঁরা যাত্রাবিরতি নেন। এ সময় বাসে চারজন নারী যাত্রী ও রনি মোল্লা নামের ওই পুরুষ যাত্রী ছিলেন। রনি ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে তাঁদের গাড়িতে ওঠেন। বিরতির সময় চাবি বাসে রেখেই তিনি (চালক) নেমে যান। রনি এ সুযোগে গাড়িটি বেপরোয়াভাবে চালিয়ে বগুড়ার দিকে রওনা দেন। শেরপুরের মির্জাপুরে গাড়ির যাত্রী সানজিদা চলন্ত গাড়ি থেকে ঝাঁপ দিয়ে মহাসড়কের ওপরে পড়েন। সেখান থেকে স্থানীয় লোকজন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে কেঁদেই যাচ্ছেন মা শামিমা আকতার ও বাবা আবদুর রউফ । বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বুধবার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেয়ে সানজিদার লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে বাবা আবদুর রউফ। তিনি বলেন, তাঁর বড় আশা ছিল লেখাপড়া করে মেয়ে তাঁর মুখ উজ্জ্বল করবেন। কিন্তু ছিনতাইকারীর কবল থেকে বাঁচতে তাঁর মেয়ে অকালে ঝরে যাবেন, তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। তিনি ছিনতাইকারীর বিচার দাবি করেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বলেন, সানজিদা আক্তারকে মৃত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আনা হয়।

এদিকে শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সৈয়দ আবুল হাশেম বলেন, বগুড়ার শাজাহানপুর থানার পুলিশের সহযোগিতায় ছিনতাই হওয়া ওই বাসের ছিনতাইকারী চালক রনি মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রনি এখন শেরপুর থানার পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। এ ঘটনায় শেরপুর থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। রনি মোল্লার বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বেতগাড়ি এলাকায়।

রনি মোল্লার স্ত্রী সুরাইয়া আফরিন বলেন, তাঁর স্বামী গত সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এর পর থেকে আর তাঁর খোঁজ পাননি। তাঁর স্বামী মাদকাসক্ত। বাসটি তাঁর স্বামী কোথায় চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তা তাঁরা জানেন না। পুলিশ তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর সব শুনেছেন।