পবা উপজেলার খড়খড়ি বাইপাস এলাকায় অবরোধ করেছে রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও কোটা প্রথার যৌক্তিক সমাধানের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিক্ষোভ চলাকালে কয়েকটি স্থানে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চরম দুর্ভোগ পড়েন সাধারণ মানুষ।

রাজশাহী
সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস খড়খড়ি বাইপাসে ক্যাম্পাসের সামনে রাজশাহীর বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। রাজশাহী নগরের বাইরে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা আটকিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করায় দুই পাশে যানজট সৃষ্টি হয়।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন, তাঁরা এর সঙ্গে একমত হয়েছেন। একটি নৈতিক আন্দোলনে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা হয়েছে। এর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ছাত্রলীগ দিয়ে এই হামলা কাপুরুষোচিত। শিক্ষার্থীরা হামলায় আহত হয়ে কাতরাচ্ছেন। এ অবস্থায় সারা বাংলার শিক্ষার্থীরা জেগে উঠেছেন। তাঁরা অধিকার আদায় করেই ঘরে ফিরবেন।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছেন। তাঁরা চেয়েছিলেন ক্যাম্পাসের ভেতরে করা হোক। কিন্তু শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান করছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, তাঁরা পর্যবেক্ষণ করছেন। প্রক্টরিয়াল বডিও আছে।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের সামনে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ–সমাবেশ করেন তাঁরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বগুড়া
কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বগুড়া সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বেলা একটায় শহরের সাতমাথা-বনানী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে সরকারি শাহ সুলতান কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার চেষ্টা করলে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। লাঠিসোঁটা হাতে তাঁরা ছাত্রলীগকে ধাওয়া করেন। ধাওয়া খেয়ে সরকারি শাহ সুলতান কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেখানেও চড়াও হন। কয়েক শ শিক্ষার্থী ছাত্রলীগকে লক্ষ্য করে ধাওয়া করেন। পুলিশ শিক্ষার্থীদের আটকানোর চেষ্টা করে। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে লক্ষ্য করে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন। বেলা দুইটা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ এবং শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা কলেজ দুটির সামনে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন। রাতের সমাবেশ থেকে মঙ্গলবার ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পূর্বঘোষণা মোতাবেক আজ সকাল সাড়ে দশটায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় ‘কোটা’ বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। 

একপর্যায়ে কলেজের সামনে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অবরোধে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। বেলা সাড়ে ১১টার পর পুলিশের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়।

এদিকে সকাল সাড়ে দশটা থেকে সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে সাতমাথা-তিনমাথা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এ সময় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হলে বেলা ১১টার দিকে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন এবং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাসরিফ আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ক্যাডাররা এ হামলা চালিয়েছে।

বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক আবদুর রহিম রানা বলেন, হামলাকারীদের শনাক্ত করা যায়নি। আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।