হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করতে সরকারের প্রচেষ্টা থাকবে: প্রধানমন্ত্রী

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার গণভবনে | ছবি: বাসস

বাসস, ঢাকা: দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে দেশব্যাপী সাম্প্রতিক তাণ্ডবের সময় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা থাকবে। তিনি বলেন, ‘আমার প্রচেষ্টা থাকবে যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করা, তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে, এটি আমার প্রচেষ্টা হবে, আমি তা করব।’

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে দেখা করেছেন। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নিহত আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন, মা মনোয়ারা বেগমসহ ৩৪ জনের পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী সঞ্চয়পত্র ও নগদ অর্থসহায়তা দিয়েছেন।

নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রীর অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।

অশ্রুসিক্ত প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘আমাকে দেখেন, আমি অনেক কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি।’ তাঁদের পাশে আছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাঁদের মতো স্বজন হারানোর বেদনা তিনিও বহন করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের ব্যথা বুঝতে পারছি। এটা আমার দুর্ভাগ্য যে আমাকে আপনাদের অশ্রু দেখতে হচ্ছে।’ এ সময় গণভবনে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: বাসস

অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে নিহতদের স্বজনদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদেরও সাহায্য চাই। যদি আপনারা কিছু জানেন, আমাদের জানাবেন।’

সাম্প্রতিক সহিংসতায় খুনের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের বিচার করতে হবে, তা না হলে মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, ‘মানুষ কী দোষ করল যে এভাবে মানুষ খুন করতে হবে! মানুষ খুন করে সরকার পতন—এটা কবে হয়, কখন হয়? সাধারণ মানুষ কী দোষ করেছে?’ তিনি বলেন, এভাবে বারবার বাংলাদেশটাকে নিয়ে খেলা করা আর হতে দেওয়া যায় না। কাজেই আমি আপনাদেরই সাহায্য চাই।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘মানুষ মেরে লাশ ঝুলিয়ে রাখার মতো এই বর্বরতা, জানোয়ারের মতো ব্যবহার, এটা কি কেউ করতে পারে। একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানের লাশ ঝুলিয়ে রাখবে পা বেঁধে! যারা এগুলোর সঙ্গে জড়িত, অবশ্যই তাদের বিচার হবে।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দাবি মানা এবং ধৈর্য ধরে তাঁদের বোঝানো হয়েছিল, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ধৈর্য ধরে সব সময় তাঁদের বোঝানো, তাঁদের সঙ্গে কথা বলা—সব চেষ্টা করেছি। কিন্তু আজকে চারদিকে এই হাহাকার। এটা তো সহ্য করা কষ্টকর।’

গণভবনে ওই অনুষ্ঠানে সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।