রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার এলাকায় মইনুল ইসলামের মতো ১২ জন ফুল বিক্রেতা আছেন। এ কয় দিনে বিক্রি নিয়ে তাঁদের সবার অভিজ্ঞতা তিক্ত | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: ‘যশোর থেকে গত শনিবার সকালে যখন রাজশাহীতে ফুল এল, তখনই দোকান বন্ধ করতে হলো। দুই ঘণ্টা কারফিউ শিথিল হলো, সেই সময়টুকু দোকান খুলতে আর বন্ধ করতেই চলে গেল। আজ যখন বেলা একটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত চার ঘণ্টা কারফিউ শিথিলের ঘোষণা দেওয়া হলো, তখন দোকান খুলে দেখি ফুল পচে গেছে। সিটি করপোরেশনের গাড়ি এলে সেই ফুল গাড়িতে তুলে দিলাম।’

গতকাল মঙ্গলবার এই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন রাজশাহী নগরের ফুল বিক্রেতা মইনুল ইসলাম। এদিন দুপুরে তাঁকে ফুল ফেলে দিতে দেখা যায়। নগরের সাহেব বাজার এলাকায় তাঁর মতো ১২ জন ফুল বিক্রেতা রয়েছেন। তাঁদের সবার অভিজ্ঞতা একই রকম।

সাহেব বাজারের জিরো পয়েন্টে ফুল বিক্রি করেন মইনুল ইসলাম। তাঁর দোকানের নাম ‘অঙ্কন ফ্লাওয়ার পয়েন্ট অ্যান্ড জুরিঘর’। মইনুল ইসলাম বলেন, গত শনিবার সকালে প্রায় ২০ হাজার টাকার ফুলসহ দোকান বন্ধ করতে হয়েছিল। সোমবার পর্যন্ত দুই ঘণ্টা করে কারফিউ শিথিল ছিল। ওই সময়টুকু ফুলের দোকান খুলতে আর বন্ধ করতেই চলে যায়। ফলে ব্যবসা হয়নি। গত সোমবার বেছে বেছে ৯০ টাকার ফুল বিক্রি করতে পেরেছিলেন। আর মঙ্গলবার মাত্র ৫০ টাকার ফুল বিক্রি করতে পেরেছেন। বাকি ফুল ফেলে দিতে হয়েছে।

মইনুল ইসলাম দুঃখ করে বলেন, মাসে দোকানভাড়া ২০ হাজার টাকা  দিতে হয়। নিচে ফুটপাতে যেখানে ফুল মেলে বসেন, তার ভাড়া দিতে হয় ১২ হাজার টাকা। দুজন কর্মচারী আছেন, তাঁদের প্রতিদিন ৬০০ ও ৭০০ টাকাসহ খাবার দিতে হয়। আর ফুল কিনতে হয় নগদ টাকা দিয়ে। তিনি বলেন, এই প্রস্তুতি সব দিনের জন্যই রাখতে হয়। কিন্তু ফুলের ব্যবসা প্রতিদিন সমান হয় না। নিজের সংসার খরচ আছে। মহাজনকে নগদ টাকা পাঠালেই কেবল পরের দিন যশোর থেকে ফুল পাঠাবেন। কোনো বাকির কারবার নেই। অথচ এই চালানের সব মাল নষ্ট হয়ে গেল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ধারদেনা করে আবার টাকা পাঠাতে হবে। না হলে ব্যবসা চলবে না।

মিলন ফুলঘরের স্বত্বাধিকারী গণেশ রায় একইভাবে নষ্ট ফুল ফেলে দিয়েছেন। তিনি বললেন, গত বৃহস্পতি ও শুক্রবারের আনা তাঁর ফুলগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এই দুই দিনে তাঁর দোকানে প্রায় ২০ হাজার টাকার ফুল ছিল। এর মধ্যে থেকে বাছাই করে গতকাল মাত্র ৩০০ টাকার ফুল বিক্রি করতে পেরেছেন। বাকি ফুল পচে গেছে। সব সিটি করপোরেশনের গাড়িতে দিয়েছেন।

‘সানফ্লাওয়ার’ নামের আরেকটি দোকানের স্বত্বাধিকারী এমরান আলীও একই কথা বললেন। তাঁর প্রায় ৩০ হাজার টাকার ফুল কেনা ছিল। গতকাল কারফিউ শিথিল হওয়ার পরে দেখছেন দোকান ও গুদামের সব ফুল পচে গেছে। তিনি বলেন, কাঁচামালের ব্যবসায়ীদের এই ঝুঁকি সব সময় থাকে। যেমন করোনার মধ্যে তাঁরা সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন। এই চার দিনের কারফিউয়ে তাঁরা আবার একই দুর্দশার মধ্যেই পড়েছেন।