বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের সামনে রিকশাচালক ও হাতে গোনা কয়েকজন ছাত্রী ছাড়া কারও উপস্থিতি দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই হল ছাড়ছেন। আজ সকাল ১০টার দিকে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেড়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁদের অনেককেই আবাসিক হল ছাড়তে দেখা যায়। সকাল ৯টা থেকে ১০ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল ও ক্যাম্পাস ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘গতকাল বুধবার রাতে ১৭টি হলের প্রতিটিতে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করছিলেন। তাঁদের আজ সকালের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুরো ক্যাম্পাস এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। তারা আপাতত ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছে। আমরা সাহায্য চাইলে সহযোগিতা করবে।’

আজ সকাল ১০টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের সামনে দেখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. শিহাবের সঙ্গে। তাঁর বাসা রাজবাড়ীতে। তিনি বলেন, সকাল থেকে গাড়ি চলাচল করছে। তবে রাস্তায় গিয়ে আটকে যাবেন কি না, সেই শঙ্কায় আছেন।

তবে বেশি বিপাকে পড়েছেন দূরদূরান্তের জেলা থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা। তাঁদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীরা বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন ছাত্রী জানান, আজ সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন। বাসা রাজশাহী থেকে অনেক দূরে হওয়ায় তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। এ জন্য তাঁরা নিকট বন্ধু অথবা আত্মীয়দের বাসায় উঠবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের রোকেয়া হল ও তাপসী রাবেয়া হলের সামনে আজ সকাল ১০টার দিকে অন্তত ১০ জন রিকশাওয়ালাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা হল ছাড়ছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই চার-পাঁচজন শিক্ষার্থীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে এসেছেন।

মো. স্বপন শেখ নামের এক রিকশাচালক জানান, যেসব শিক্ষার্থীদের বাড়ি অনেক দূরে, তাঁরা সকাল সকাল হল ছেড়েছেন। আবার রাস্তায় ঝামেলার হওয়ার কথা ভেবে অনেকেই নিকট আত্মীয় বা বন্ধুদের বাসায় উঠছেন। সকাল থেকে মোট চারজন শিক্ষার্থীকে রাজশাহী রেলস্টেশনে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।

এখন ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলে জানান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জামিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের পর ক্যাম্পাসে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তাঁরা রাতে ক্যাম্পাসে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া বাকি সব শিক্ষার্থী হল ছেড়েছেন। যে কয়েকজন হলে আছেন, তাঁরাও দ্রুত হল ত্যাগ করবেন।

এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক কমিটি নেই। শুরুতে যাঁরা সমন্বয়ক কমিটিতে ছিলেন, তাঁদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এরপর তাঁরা ‘কোটা পুনর্বহাল করা চলবে না (রাবি)’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করে আসছেন। আজ সকাল ১০টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত সেই গ্রুপে কোনো কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

তবে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশ বাহিনীর হামলা এবং নিপীড়নের প্রতিবাদে কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকবৃন্দ’। আজ দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি ফলকের চত্বরে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। তাঁরা আশপাশে থাকা সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।