মালামাল সরিয়ে নেওয়ায় মেলার স্টলগুলোও ফাঁকা হয়ে যায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি রাজশাহী: ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের’ রাজশাহী পর্বের মেলা উদ্বোধনের পরই বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজশাহীর কালেক্টরেট মাঠে বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান প্রধান অতিথি হিসেবে এ মেলার উদ্বোধন করেন। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে মেলার মাঠে পানি জমে যায়। মালামাল সরিয়ে নেওয়ায় মেলার স্টলগুলোও ফাঁকা হয়ে যায়।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড আয়োজিত এ মেলায় নিজ নিজ এলাকার ঐতিহ্যবাসী জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসিয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন জেলার উদ্যোক্তারা। আজ শনিবার সকালে কালেক্টরেট মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, কাদা-পানিতে পুরো মাঠ ভরে গেছে। এ অবস্থায় কাপড় দিয়ে তৈরি করা ৮৭টি স্টলের প্রায় সবই ফাঁকা পড়ে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার আশঙ্কায় উদ্যোক্তারা মালামাল গুটিয়ে নিয়েছেন। দর্শনার্থীও নেই। তাই উদ্যোক্তারা মেলে ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
রাজশাহীতে কয়েক দিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় লাখ লাখ টাকা খরচ করে এই মাঠে কেন মেলার আয়োজন করা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অবশ্য মন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল স্টিলের কাঠামোর ওপর টিনের ছাদের নিচে। কিন্তু পুরো মাঠই আগে থেকেই ছিল কাদা-পানিতে ভরা। ইট দিয়ে রাস্তা করে কোনোরকমে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু উদ্বোধনের পরই তুমুল বৃষ্টিতে মেলা ভেসে গেছে।
উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের যেসব উদ্যোক্তা এসেছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে ৩ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে। মালামাল আনতে আরও কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মেলা পণ্ড হয়ে যাওয়ায় তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ঢাকার বাইরের যেসব উদ্যোক্তা এসেছিলেন, তাঁদের অবশ্য ৩ হাজার টাকা করে দিতে হয়নি। তাঁদের ক্ষতি একটু কম। তবে বৃষ্টির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সবাই। দিনাজপুর থেকে ডালের পাঁপড়ের দোকান নিয়ে এসেছিলেন উদ্যোক্তা সম্পা দাস মৌ। তিনি বলেন, ‘চুলায় পানি ঢুকে গেছে। তাই চলে যেতে হচ্ছে।’
ঢাকার এম আর লেদারের স্বত্বাধিকারী ফরিদা ইয়াসমিন বীথি একটি স্টল দিয়েছিলেন। তিনি অন্য একটি স্টলে বসে ছিলেন। ফরিদা বলেন, ‘পানির কারণে আমার স্টলে বসার মতো অবস্থা নেই। তাই এখানে বসে আছি। বর্ষাকালে এই মাঠে মেলা আয়োজন করা ঠিক হয়নি। কাপড় দিয়ে তৈরি স্টলে মালামাল রাখা যাচ্ছে না। এখন চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।’
মেলার মাঠে বৃষ্টির পানি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ঢাকা থেকে বুটিকের কাপড় নিয়ে আসা ব্যবসায়ী শামীম হোসেন বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরই বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যায়। অনেকে চলে গেছে। আমরাও চলে যাওয়ার জন্য সব গুছিয়ে নিচ্ছি। আমরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। এখন আয়োজকেরা কিছু সহায়তা করলে ভালো হয়।’
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, ‘মোট ৮৭টি স্টল ছিল। উদ্বোধনের পরই বৃষ্টি শুরু হলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। প্রথম দিনই ৩০ জন উদ্যোক্তা ফিরে গেছেন। আজ শনিবার কয়জন গিয়েছেন সেটা এখনো জানি না।’
কাদা-পানির মাঠে ফেস্টিভ্যালের আয়োজন নিয়ে জানতে চাইলে আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন আমাদের তিনটি মাঠ দেখিয়েছিল। এর মধ্যে দুটি জায়গায় পরীক্ষা চলছে। তাই এই মাঠকেই বেছে নিতে হয়েছে। ইট বিছানোর পরও এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে যে, পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে। মেলার আরও একদিন সময় আছে। দেখা যাক এই এক দিনে কী হয়!’