মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি গ্রেপ্তার হননি ১৯ মাসেও

পুরান ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে মোটরসাইকেলে (তিনজন বসা পেছনের মোটরসাইকেল) করে তাঁদের সহযোগীরা পালিয়ে যাচ্ছেন বলে ধারণা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের | ছবি: সংগৃহীত

আহমদুল হাসান: ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশি হেফাজত থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার ১৯ মাস পরও তাঁদের ধরতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্তও শেষ করতে পারেনি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। অভিযোগপত্র দাখিল করতে তারা দফায় দফায় সময় নিচ্ছে।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার মামলায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ মামলায় আদালতে দুই আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিটিটিসির পরিদর্শক আজিজ আহমেদ বলেন, দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলেই অভিযোগপত্র দেওয়া যায়নি। অন্তত একজনকে গ্রেপ্তার করা গেলেও তদন্ত কার্যক্রম শেষ করা যেত। তাঁর ভাষ্য, দুই জঙ্গি এখনো দেশেই রয়েছেন। তবে তাঁরা ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করছেন। ফলে তাঁদের গ্রেপ্তার করতে সময় লাগছে। তবে তাঁদের গ্রেপ্তারে দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০টি অভিযান চালানো হয়েছে।

২০২২ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের সামনে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নেয় অন্য জঙ্গিরা। তাঁরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল–ইসলামের সদস্য। দুই জঙ্গি জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

ঘটনার দিন মোহাম্মদপুর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় অভিযোগ গঠনের (চার্জ শুনানি) শুনানির জন্য আট জঙ্গিকে আদালতে নেওয়া হয়। সিজেএম আদালতের প্রধান ফটকের সামনে নেওয়ার পর হাতকড়া পরা দুই জঙ্গি তাঁদের নিরাপত্তায় থাকা এক পুলিশ সদস্যকে মারধর শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আশপাশ থেকে আর কয়েকজন জঙ্গি পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এরপর তারা সিজেএম আদালতের প্রধান ফটকের উল্টো দিকের গলি দিয়ে মোটরসাইকেলে করে দুই জঙ্গিকে নিয়ে পালিয়ে যায়।

ঘটনার দিন রাতেই পুলিশ ২০ জনকে আসামি করে মামলা করে। মামলার এজাহারে বলা হয়, আনসার আল–ইসলামের সামরিক শাখার নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে সাগর ওরফে বড় ভাই ওরফে মেজর জিয়ার (চাকরিচ্যুত মেজর) পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এতে জড়িত আনসার আল–ইসলামের ১৫ থেকে ১৮ জন সদস্য।

সিটিটিসি জানিয়েছে, মামলায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ১২ জনের নাম এজাহারে রয়েছে। বাকি আটজনকে তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া হুসনা আক্তার ও বখতিয়ার রহমান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।