ঈশ্বরদীতে একসঙ্গে এত কবর খুঁড়তে হবে কল্পনাও করিনি

আজ শুক্রবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে নিহত চারজনের একসঙ্গে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে আজমপুর কবরস্থানে একই সঙ্গে তাঁদের দাফন করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: '২০ বছর ধরে কবর খুঁড়ে আসছি। একসঙ্গে এত কবর খুঁড়তে হবে তা কোনোদিন কল্পনাও করিনি। গ্রামে এত কবর খোঁড়ার লোকও নেই। আশপাশের এলাকার মানুষের সহযোগিতায় কবরগুলো খুঁড়তে হয়েছে।'

শুক্রবার দুপুরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের ডিগ্রি পাড়া আজমপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে পাশাপাশি চারটি কবর খোঁড়ার কাজে সম্পৃক্ত বৃদ্ধ গেন্দু মিয়া (৫২) অশ্রুসজল চোখে কথাগুলো বলছিলেন।

সলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারী গ্রামের রিংকু মিয়া, শিপন ও মনির হোসেন বলেন, 'জীবনে অনেক কবর খুঁড়েছি। অনেক অভিজ্ঞতাও আছে আমাদের। কিন্তু একসঙ্গে চারটি কবর এবারই প্রথম খুঁড়লাম।'

তারা আরও বলেন, 'বুকে অনেক চাপা কষ্ট নিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কবরগুলো খুঁড়েছি। এই গ্রামে আমরা ৮-১০ জন কবর খোঁড়ার কাজ করি। আমাদের পক্ষে এত কবর খোঁড়া সম্ভব ছিল না। পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকেরা কবর খোঁড়ার কাজে সহযোগিতা করায় সুষ্ঠুভাবে কবর খোঁড়ার কাজ করতে পেরেছি।'

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাত বন্ধু মিলে প্রাইভেট কারে বেড়াতে বের হয়েছিলেন। বেড়ানো শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া এলাকায় পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কে প্রাইভেট কারটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে ঘটনাস্থলে তিনজন ও হাসপাতালে নেওয়ার পর দুজনের মৃত্যু হয়। বাকি দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

স্বজনদের বুকফাটা আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার বাতাস | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিহত ব্যক্তিরা হলেন আজমপুর গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে জিহাদ হোসেন (২৫), ইলিয়াস হোসেনের ছেলে সিয়াম হোসেন (২৩), মাসুম হোসেনের ছেলে শিশির ইসলাম (২২), আনোয়ার হোসেনের ছেলে বিজয় হোসেন (২৫) ও ভারইমারি গ্রামের ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে শাওন হোসেন (২৪)। তাঁদের মধ্যে বিজয় হোসেন প্রাইভেট কারটির চালক ছিলেন। বাকি চারজন ঈশ্বরদী টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের ছাত্র।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার তাঁদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। এসময় বাড়িতে স্বজন ও গ্রামবাসীর আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে।

এর আগে, সরেজমিনে গ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়, লাশের অপেক্ষায় স্বজনেরা। চার বাড়িতেই চলছে মাতম। কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পুরো গ্রাম। প্রতিবেশীরা এসে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্বজনদের। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিহত ব্যক্তিদের লাশ এসে পৌঁছায় গ্রামটিতে। কান্নায় আরও ভারী হয় গ্রামের পরিবেশ। বেলা পৌনে তিনটার দিকে  আজমপুর মসজিদের সামনে তাঁদের চারজনের একসঙ্গে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে আজমপুর কবরস্থানে একই সঙ্গে তাঁদের দাফন করা হয়।

লাশ শেষবারের মতো দেখতে মানুষের ভিড় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ঈশ্বরদী পোল্ট্রি খামার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় পদকপ্রাপ্ত খামারি আকমল হোসেন জানান, চালক বিজয় হোসেন ঢাকায় উবারের গাড়ি চালান। গতকাল তিনি গাড়ি নিয়ে বাড়িতে আসেন। এরপর বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে বের হন। ঘোড়াফেরা শেষে বাড়ি ফেরার পথে তাঁদের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারায়।

আকমল হোসেন বলেন, পাঁচ বন্ধু একসঙ্গে চলতেন। একসঙ্গেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। একই স্থানে তাঁদের চারজনের দাফন হয়েছে। একজনের বাড়ি দূরে হওয়ায় তাঁকে আলাদাভাবে দাফন করা হয়েছে।