ইংল্যান্ডের হৃদয় ভেঙে ইউরোপের রাজা স্পেন

স্পেনের জয়ের দুই নায়ক নিকো উলিয়ামস ও মিকেল ওইয়ারসাবাল | উয়েফা

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাহ, ফুটবল ‘ঘরে ফিরল’ না এবারও। ফিরতে দিল না স্পেন। ইংল্যান্ডের ৫৮ বছরের অপেক্ষা আরও বাড়িয়ে বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়াম ভাসল লাল উচ্ছ্বাসে। ২-১ গোলে ইউরোর ফাইনাল জিতে ১২ বছর পর আবার  ইউরোপের মুকুট ফিরে পেল স্পেন।

স্পেনের নিকো উলিয়ামস ও মিকেল ওইয়ারসাবালের গোলের মাঝে ইংল্যান্ডের একমাত্র গোলটা কোল পালমারের। ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে চতুর্থবারের মতো ইউরো চ্যাম্পিয়ন হলো স্প্যানিশরা।

ম্যাচের প্রথম গোলটা হলো ৪৭ মিনিটে। এবং সবাইকে কিছুটা চমকে দিয়েই।

প্রথমার্ধ এত ম্যাড়ম্যাড়ে কেটেছে যে, মনে হচ্ছিল এই ম্যাচ বুঝি দুই দলই টাইব্রেকারে নিতে খেলছে। স্পেনের বলের দখল ৭০ ভাগ, কিন্তু গোলের দিকে শট মাত্র একটা। ইংল্যান্ডের বলের দখল ৩০ ভাগ, তাদেরও শট একটা। কোনোটাই ইংলিশ গোলকিপার জর্ডান পিকফোর্ড বা স্পেনের উনাই সিমনকে কোনো পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি। যাকে নিয়ে এই ম্যাচের আগে এত কথা, স্পেনের সেই ‘বিস্ময়বালক’ লামিয়ে ইয়ামাল বিস্ময়করভাবে অদৃশ্য ম্যাচের প্রথমার্ধে। মনে হচ্ছিল, দ্বিতীয়ার্ধেও এমনই ফুটবল দেখতে হতে পারে পুরোটা সময়।

ভুল ভাঙ্গাল স্পেন, এবং সেটা বিরতির পর মাঠে নেমেই। ভুল ভাঙ্গালেন ইয়ামালই। প্রথমার্ধের পুরোটা সময় তাঁকে চোখে চোখে রেখেছিলেন লুক শ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে একটু জন্য চোখের আড়াল করলেন। ইয়ামালও নিলেন সেই সুযোগটা। তাঁর দুর্দান্ত পাস থেকে নিকো উইলিয়ামসের গোলে স্পেন এগিয়ে গেল, ১-০।

সেটা ২-০ হয়ে যেতে পারত দুই মিনিট পরেই। উইলিয়ামসের পাস পেয়ে বক্সের মাঝামাঝি জায়গা থেকে শট নেন দানি ওলমো। কিন্তু সেটা চলে যায় বাইরে দিয়ে।

৬০ মিনিটে কাইল ওয়াকারের হাতে অধিনায়কের দায়িত্ব দিয়ে মাঠ ছাড়েন হ্যারি কেইন। তাঁর বদলি হিসেবে মাঠে নামেন নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে জয়ের নায়ক ওলি ওয়াটকিনস। তবে এদিন আর তিনি নায়ক হতে পারেননি। অবশ্য ম্যাচে ইংল্যান্ডের সমতা ফেরানো গোলটা এক বদলি খেলোয়াড়ই করেছেন, কোল পালমার। ৭৩ মিনিটে ডান পাশ থেকে সাকা বল বাড়ান বক্সের ভেতর থাকা জুড বেলিংহামের দিকে। বল পেয়েই বেলিংহাম দুর্দান্তভাবে পাঠিয়ে দেন পেছনে থাকা পালমারের দিকে। চেলসি মিডফিল্ডারের দুর্দান্ত শট ঝাপিয়ে পড়েও আটকাতে পারেননি উনাই সিমন।

স্পেন অবশ্য এর আগেই ব্যবধান বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু ৬৭ মিনিটের ইয়ামালের শট ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড, এর দুই মিনিট পরেই ফ্যাবিয়ান রুইজ বল মারেন ক্রসবারের উপর দিয়ে। ইয়ামাল ৮২ মিনিটে আরও একটা সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন দানি ওলমোর পাস থেকে।

ত্যবে স্পেনকে সেজন্য আক্ষেপে পুড়তে হয়নি। আসলে পুড়তে দেননি অধিনায়ক আলভারো মোরাতার বদলি নামা মিকেল ওইয়ারসাবাল। ৮৬ মিনিটে কুকুরেয়ার সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে নেওয়া দুর্দান্ত এক শটে তিনি স্তব্দ করে দেন বার্লিনের ইংলিশ সমর্থকদের।

ইংল্যান্ড আবার ম্যাচে ফেরার সুযোগ পেয়েছিল নির্ধারিত সময়ের একেবারে শেষ দিকে। পালমারের কর্নার থেকে আসা বলে ডেক্লান রাইসের দারুণ হেড ফিরিয়ে দেন উনাই সিমন। ফিরতি বলে হেড করেন মার্ক গুয়েহি। এবার একেবারে গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন দানি ওলমো। বেঁচে যায় স্পেন,  যোগ হওয়া ৪ মিনিট সময় কাটিয়ে দিয়ে মাতে শিরোপা উল্লাসে।