কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশ করের কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় সাতটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেন স্থানীয় জনতা। গতকাল বিকেলে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি কুষ্টিয়া: কোটা সংস্কারের দাবি ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচারের দাবিতে কুষ্টিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে তিনটা থেকে রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর এলাকা থেকে চৌড়হাস এলাকা পর্যন্ত দীর্ঘ তিন কিলোমিটার পুরো দখলে নেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা।

একদল দেশীয় অস্ত্রধারী যুবক-তরুণ আন্দোলনকারীদের ওপর তিন দফায় ধাওয়া ও হামলা চালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পাল্টা ধাওয়ায় তাঁরা পালিয়ে যান। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ বারবার এই হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে। দ্বিতীয় দফায় হামলার সময় যুবক-তরুণেরা সাতটি মোটরসাইকেল ফেলে গেলে সেগুলো ভাঙচুর করা হয়। পরে স্থানীয় জনতা সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেন।

এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় একটি মেইল ট্রেন মজমপুর রেলগেট এলাকায় পৌঁছালে অবরোধকারীরা ট্রেনে ইটপাটকেল মেরে লাইট ভেঙে দেন। এ সময় ট্রেনের বগিতে থাকা যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কয়েকজন আহতও হয়েছেন বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মজমপুর রেলগেট এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। এ সময় পাশেই পৌরসভার সামনে থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে তাঁদের ধাওয়া দেন। এ সময় পুলিশ সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা দ্রুত মিছিল নিয়ে তিন কিলোমিটার দূরে চৌড়হাস মোড়ে চলে যান। পেছনে থাকা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মজমপুর বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাস ভাঙচুর করেন। ভাঙচুরের সময় সেখানে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান ওরফে অনিক নেতা-কর্মীদের দ্রুত সরিয়ে নেন। এরপর তাঁরা মিছিল নিয়ে শহরের এনএস রোড হয়ে বঙ্গবন্ধু মার্কেটে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে চলে যান।

এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চৌড়হাস মোড় এলাকায় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর ৪টা ২০ মিনিটের দিকে চৌড়হাস এলাকায় আবারও ছাত্রলীগ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালাতে যায়। এ সময় আন্দোলনকারীরা আবারও তাঁদের ধাওয়া দেন। তাঁদের ধাওয়ায় সাতটি মোটরসাইকেল ফেলে উল্টো পথে আবারও পালিয়ে যান। পড়ে থাকা মোটরসাইকেলগুলো ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এ সময় তিন-চারজনকে মারধর করা হয়। এরপরও আন্দোলনকারীরা তাঁদের অবরোধ ছেড়ে চলে যান। পরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন।

বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে তৃতীয় দফায় আবার হামলা চালাতে গেলে চৌড়হাস এলাকার বাসিন্দারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাঁদের আবারও ধাওয়া দেন। এবারও তাঁরা পালিয়ে যান। এ সময় স্থানীয় জনতা সাতটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন।

পুরো ঘটনার সময় পুলিশের অন্তত ৫০ জন সদস্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন। পুরো শহরের একাংশে থমথমে অবস্থার সৃষ্টি হয়। দেড় ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসে। এ সময় স্থানীয় জনতা আগুন নেভাতে দেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আন্দোলনকারীরা মজমপুর রেলগেট এলাকায় চলে আসেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাঁরা সেখানে অবস্থান নেন। সাড়ে সাতটার দিকে একটি মেইল শাটল ট্রেন এলে সেটি আটকে দেওয়া হয়। ট্রেনের সামনের লাইট ভাঙচুর করা হয়। চালক ভয়ে দ্রুত নেমে পড়েন। এলোপাতাড়ি ইটপাটকেলে ট্রেনের কয়েকজন যাত্রী আহত হন। এ সময় পুলিশ বাধ্য হয়ে লাঠিপেটা করে। পরে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। রাত পৌনে আটটার দিকে সবকিছু স্বাভাবিক হয়।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, পুলিশ ধৈর্যসহকারে সবকিছু স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছে।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমানের মুঠোফোনে বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। এ জন্য তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।