রাজশাহীতে সাড়ে আট কিলোমিটার হেঁটে স্মারকলিপি দিলেন শিক্ষার্থীরা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজ রোববার শিক্ষার্থীদের গণপদযাত্রা কমর্সূচি শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের একদফা দাবিতে রাজশাহীতে গণপদযাত্রা করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

আজ রোববার বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করেন তাঁরা। সোয়া দুই ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার হেঁটে বেলা দেড়টার দিকে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে এসে পৌঁছান তাঁরা। পরে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের হাতে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন।

এই কর্মসূচিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।

স্মারকলিপি গ্রহণ করে বেলা দুইটার দিকে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বাইরে এসে গেটে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বলেন, তিনি সরকারের কোনো প্রতিনিধি নন, প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মকর্তামাত্র। প্রশাসনিক নিয়ম অনুযায়ী যেভাবে স্মারকলিপি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়, সেটি তাঁরা আন্তরিকতার সঙ্গে শিগগিরই হস্তান্তর করবেন। জনগণের জানমালের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে শিক্ষার্থীদের খেয়াল রাখার অনুরোধ করেন তিনি।

স্মারকলিপি দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মসূচি হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর রাজশাহী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দিয়েছি।। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা স্মারকলিপিতে ২৪ ঘণ্টা সময় সীমা বেঁধে দিয়েছি। এতেও যদি নির্বাহী বিভাগের কোনো ধরনের আশ্বাস আমরা না পাই, তাহলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছেন, ২০১৮ সালের পরিপত্রে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। কেননা শিক্ষার্থীরা সব গ্রেডের সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছিল। প্রথমত, কোটার অসহনীয় মাত্রা মানে দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণীদের দাবি ও আন্দোলনের সঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রহসন। মুক্তিযুদ্ধের যে মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার তা নিশ্চিত করতে ও একটি দক্ষ প্রশাসন গড়তে মেধাভিত্তিক নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। কোটা পদ্ধতি না থাকলে নাগরিকদের অনগ্রসর অংশ প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ থেকে বঞ্চিত হবে।

শিক্ষার্থীরা আরও উল্লেখ করেছেন, হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, ‘সরকার চাইলে কোটা পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারবে। ছাত্রসমাজ দীর্ঘদিন যাবৎ ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে রাজপথে ঝড়-বৃষ্টি-খরতাপকে উপেক্ষা করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আমাদের কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হোক, তা আমরা কখনোই চাই না। আমরা দ্রুতই পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে চাই। ছাত্রসমাজ আশা রাখে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে উদ্যোগ গ্রহণ করে বাধিত করবেন। অন্যথায় ছাত্রসমাজ নিজেদের অধিকার রক্ষায়, বৈষম্যমুক্ত ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ নির্মাণে সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য হবে।’