বগুড়া জেলার মানচিত্র |
প্রতিনিধি বগুড়া: কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুর ও সহিংসতার একাধিক মামলায় বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিমসহ (বাদশা) বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছয় কাউন্সিলরকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন তাঁরা। এতে পৌরসভার নাগরিক সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দাবি, আত্মগোপনে থেকেও কৌশলে দাপ্তরিক কাজকর্ম করছেন এসব জনপ্রতিনিধি।
পৌরসভাটির ওই ছয় কাউন্সিলর হলেন এরশাদুল বারী এরশাদ (৮ নম্বর ওয়ার্ড), পরিমল চন্দ্র দাস (৬ নম্বর ওয়ার্ড), সিপার আল বখতিয়ার (১১ নম্বর ওয়ার্ড), এনামুল হক সুমন (১২ নম্বর ওয়ার্ড), রুস্তম আলী (২০ নম্বর ওয়ার্ড) এবং সংরক্ষিত (১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড) নারী কাউন্সিলর শিরিন আকতার। তাঁদের মধ্যে এরশাদুল বারী ও শিরিন আকতার জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। পরিমল চন্দ্র দাস জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বগুড়া শহর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবদলের দুই দফা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন সিপার আল বখতিয়ার (বর্তমানে বহিষ্কৃত)। অন্যদিকে জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্বে আছেন এনামুল হক সুমন, ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি পদে আছেন রুস্তম আলী।
বগুড়া সদর থানা–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৬ জুলাই বগুড়া শহরের সাতমাথায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ওই সময় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহদপ্তর সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাজা বাদী হয়ে গত সোমবার বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা করেন। এতে জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশাসহ ৮৭ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগরকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীনুজ্জামান বলেন, এ মামলার অন্যতম আসামি বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম। গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপন রয়েছেন তিনি। ওই মামলার এজাহারে ৩ ও ৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে বগুড়া পৌরসভার এরশাদুল বারী এরশাদ ও পরিমল চন্দ্র দাসকে। এ ছাড়া মামলার ২৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে নারী কাউন্সিলর শিরিন আকতারকে।
অন্যদিকে সিপার আল বখতিয়ারকে কোটা আন্দোলনের সহিংসতার সময় বগুড়ায় বিচারকদের বাসায় হামলার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়, বখতিয়ারের নেতৃত্বে ও নির্দেশে ২৫ আসামিসহ অজ্ঞাতনামা অনেকেই ১৮ জুলাই বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড় এলাকায় সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ও ককটেল ছোড়েন। পরে তাঁরা জেলার বিচারকদের বাসভবনে হামলা করে বেশ কয়েকটি যানবাহন পুড়িয়ে দেন।
১৯ জুলাই বগুড়া শহরের স্টেশন সড়কের আমতলা মোড় এলাকায় কোটা আন্দোলনের সমর্থনে সড়ক অবরোধ করা হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে সিয়াম (১৬) নামের পথচারী এক কিশোর নিহত হয়। এ ঘটনায় ২১ জুলাই সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাকির আল আহসান বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। এতেও আসামি (২ নম্বর) করা হয়েছে জামায়াত–সমর্থিত কাউন্সিলর এরশাদুল বারীকে।
১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে শহরের থানা মোড় এলাকায় সহিংসতা হয়। সেখানে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে বগুড়া সদর থানার এসআই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৯ জুলাই বিএনপি-জামায়াতের ৩৩ নেতা–কর্মীকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার এজাহারে ৭ নম্বর আসামি করা হয় পরিমল চন্দ্র দাসকে। একই দিন শহরের কলোনি এলাকায় সরকারি পলেটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় বগুড়া শহরের বনানী ফাঁড়ির এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে এনামুল হক সুমনকে।
১৮ জুলাই শহরের সাতমাথায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় বগুড়া সদর থানার এসআই বেদার উদ্দিন বাদী হয়ে ১৩ জনকে আসামি করে বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে রুস্তম আলীকে।
এসব মামলার পর থেকে মেয়রসহ ওই ছয় কাউন্সিলর পলাতক আছেন বলে জানান জেলা
বিএনপির সহসভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাছেদ।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হয়রানিমূলক
মামলায় বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌরসভার মেয়রসহ বিএনপির পাঁচজন এবং
জামায়াত–সমর্থিত এক কাউন্সিলরকে বিভিন্ন মামলার আসামি করা হয়েছে। মেয়র ও
কাউন্সিলররা গ্রেপ্তার এড়াতে কৌশলে দাপ্তরিক কাজকর্ম করছেন।