ঈশ্বরদীতে গৃহকর পুনর্মূল্যায়নে বাড়ি মালিকদের স্বস্তি

গণশুনানিতে কথা বলছেন বাড়ি মালিকেরা। সোমবার দুপুরে পৌরসভা চত্বরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন   

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদীতে পৌর নাগরিকদের গৃহ কর নিয়ে গণশুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য ৫২২ জনকে নোটিশ দেওয়া হয়। এরমধ্যে সোমবার সকালে পৌরসভা চত্বরে অনুষ্ঠিত শুনানিতে ৪১১টি আপিল নিষ্পত্তি করা হয়। আপিলে উপস্থিত ছিলেন ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা। তিনি নিজে করদাতার সমস্যা শুনে আপিল নিস্পত্তি করেন।

শুনানিকালে মেয়র করদাতার কাছে জানতে চান, আপনি কত কর দিতে চান। এসময় কেউ পাঁচশ টাকা, কেউ এক হাজার টাকা বৃদ্ধির কথা বলেন। আবার কেউ আগের পরিমাণেই কর দিতে চান। এরপর মেয়র করদাতা যা কর দিতে চাচ্ছেন সেই পরিমাণ টাকা এবং করদাতার দলিলাদি দেখে স্বল্প কর নির্ধারণ করে দেন। কাউকে আবার আগের পরিমাণ গৃহকরই নির্ধারণ করে দেন মেয়র। এতে সন্তুষ্ট হন তাঁরা। এসময় কাচা, সেমিপাকা টিন চাউনি, ওয়াল পাকা টিনের চাউনি, পুরাতন বাড়ী, বহুতল ভবনের গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের পরপরই অনেকে তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধও করেন।

এসেসমেন্ট রিভিউ বোর্ড এর শুনানীতে আশা শৌলপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, স্বামী মারা গেছেন চার বছর। ৫ শতাংশ জমিতে সেমি পাকা বাসায় তিন মেয়ে নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছি। কিছুদিন আগে ঈশ্বরদী পৌর কর্তৃপক্ষের নোটিশ সেই কষ্টের জীবনে যেন বজ্রাঘাত ঘটালো। আগে গৃহকর দিতাম মাত্র ২১০০ টাকা, সেখানে নতুনভাবে কর নির্ধারণ করা হয় ১১ হাজার ২০০ টাকা! যা আমার পক্ষে কোনোভাবেই পরিশোধ করা সম্ভব ছিলো না। তবে আজ (রোববার) গৃহকর শুনানীতে তা ৩০০০ টাকা পুনঃনির্ধারণ হয়েছে। এটা আমাদের পরিবারের জন্য স্বস্তির খবর।

একই এলাকার বাসিন্দা ইদ্রিস আলীর একতলা একটি ভবনের জন্য গৃহকর দিতে হতো ২ হাজার ৪০ টাকা। কিন্তু নতুন করে নির্ধারিত কর কাঠামায় তার গৃহকর দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৪০০ টাকা। শুনানীতে ইদ্রিস আলীর গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন করে ৩ হাজার ৭৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এনজিও কর্মী কাজল আলম বলেন, টিনশেডের একটি বাড়ির জন্য আমি কর দিতাম মাত্র ১ হাজার ৮৮২ টাকা। কিন্তু সম্প্রতি পৌরসভার পক্ষ থেকে নোটিশ দিয়ে জানানো হয়, এখন থেকে ১৯ হাজার ১৬০ টাকা কর দিতে হবে। এই নোটিশ দেখে সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম, যাই হোক এই অবিচার মেনে নেবো না; তাই ঈশ্বরদী সচেতন নগরবাসীর আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলাম। শুনানীতে ২৫০০ টাকা গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে করে কর্তৃপক্ষের প্রতি পৌরবাসীর আস্থা ফিরে এসেছে।

জানতে চাইলে ইছাহক আলী মালিথা বলেন, আমি ঈশ্বরদীর সন্তান। যে পৌরবাসী আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র বানিয়েছে তারাই গৃহকর নিয়ে ভোগান্তিতে পড়বে, এটা আমি হতে দেব না। ১৬দিনের গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে। গৃহকর নিয়ে যে কোন অভিযোগ সমাধানে আমি এই রিভিউ বোর্ড বসিয়েছি। কারো যদি গৃহকর বেশি হয়ে থাকে, তবে আপনারা রিভিউ বোর্ডে আসুন, আমাকে জানান, আমি কমিয়ে দেব।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, পৌর সচিব জহুরুল ইসলাম, কাউন্সিলর আবুল হাশেম, কামাল উদ্দিন, মনিরুল ইসলাম সাবু, জাহাঙ্গীর আলম, আমিনুর রহমান, ওয়াকিল আলম, আব্দুল লতিফ মিন্টু, আবু জাহীদ, ইউসুফ আলী, নারী কাউন্সিলর ফরিদা ইয়াসমিন, রহিমা খাতুন ও ফিরোজা বেগম প্রমুখ।