ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কচুরিপানার জৈব সার ‘জলকমল’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কচুরিপানা থেকে বানানো হয় জৈব সার | ফাইল ছবি

প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে তিতাস নদের পারে কচুরিপানা থেকে তৈরি হচ্ছে জৈব সার। এই সার উৎপাদন করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। জলজ উদ্ভিদ থেকে তৈরি জৈব সারের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জলকমল’। সার প্যাকেটজাত করে গায়ে স্টিকার লাগিয়ে বিসিআইসির সারের ডিলারদের দোকানে বিক্রি হচ্ছে। স্বল্প খরচে ও সহজ পদ্ধতিতে উৎপাদিত এ সার দামে বেশ সাশ্রয়ী। উপজেলার অনেক কৃষিজমিতে এই সার ব্যবহার করা হচ্ছে।

২০২৩ সালে শুরুর দিকে নবীনগরের নদীপথ পরিষ্কার রাখতে নবীনগর ইউএনওকে নির্দেশ দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া তৎকালীন জেলা প্রশাসক শাহ্গীর আলম। তখন জেলার সার ও বীজ ব্যবস্থাপনার সভায় কচুরিপানা থেকে কিছু উৎপাদন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর ইউএনও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গেও কচুরিপানা থেকে কিছু উৎপাদন নিয়ে আলোচনা করেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাঁকে কচুরিপানা থেকে জৈব সার তৈরি কথা জানান। এরপর তাঁরা জৈব সার তৈরি শুরু করেন।

জৈব সার তৈরির প্রণালি
মূলত দুটি পদ্ধতিতে কচুরিপানা থেকে জৈব সার তৈরি করা হয়। একটি স্তূপ বা গাদা পদ্ধতি, অন্যটি চৌবাচ্চা পদ্ধতি। কচুরিপানাকে দ্রুত পচাতে উপকরণ হিসেবে ইউরিয়া এবং ট্রাইকোডার্মা নামের ছত্রাক ও চুন ব্যবহার করা হয়। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি কার্যালয় যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়ে কচুরিপানা সংগ্রহ করে।

কচুরিপানা সংগ্রহের পর নিচের কালো অংশ কেটে ফেলে পাতাসহ বাকি অংশ পলিথিনের ওপর রেখে স্তূপ তৈরি করতে হয়। কচুরিপানার নিচের অংশ থাকলে পচন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হয়। পাতাসহ বাকি অংশটুকুর দেড় টন পরিমাণ স্তূপ করে সমপরিমাণ গোবর মিশিয়ে দু-তিন দিন রোদে শুকাতে হয়। এরপর সাজানো স্তরের ওপর ১৫ সেন্টিমিটার পর পর ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা নামের ছত্রাক এবং ২০০ গ্রাম চুন ছিটিয়ে দিতে হয়। স্তূপ তাড়াতাড়ি পচে সার হওয়ার জন্য স্তর সাজানোর এক মাস পর প্রথমবার এবং দুই মাস পর দ্বিতীয়বার গাদার স্তর উল্টিয়ে দিতে হবে।

সার পচলে ধূসর বা কালো বর্ণ ধারণ করে। তখন তা আঙুলের চাপে গুঁড়া হয়ে যাবে। এভাবেই দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে কচুরিপানা থেকে জৈব সার উৎপাদন করা হয়। এভাবে চৌবাচ্চা পদ্ধতিতেও কচুরিপানা থেকে জৈব সার তৈরি করা যায়।

গত বছরের ২৬ অক্টোবর মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে এই সার ব্যবহারের বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। পরে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এক লাখ টাকা ব্যয়ে পাইলট আকারে কচুরিপানা থেকে জৈব সার উৎপাদনের কার্যক্রম নেয় উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি কার্যালয়। চলতি বছরের ২৩-২৪ মার্চ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় ইনোভেশন শোকেজিং প্রতিযোগিতায় এটি যৌথভাবে প্রথম স্থান অর্জন করে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জৈব সার তৈরিতে মিশ্রণে অর্ধেক গোবর ও অর্ধেক কচুরিপানা ব্যবহার করা হয়। উপজেলার তিনজন উদ্যোক্তাকে প্রস্তুত করেছি এটা উৎপাদনের জন্য। উপজেলার প্রত্যেক সারের ডিলারকে জৈব সার বিক্রিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিসিআইসির সারের ডিলারের মাধ্যমে ২৬টি দোকানে জৈব সার কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৫০ বস্তায় জলকমলের স্টিকার লাগিয়ে ১০ টন সার প্যাকেটে ভরা হয়েছে। প্রতি কেজি সার ১৫ টাকা। এই জৈব সার ব্যবহার করে মাছ, ধান, গম, ভুট্টা, পাট, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, বেগুন, কচু, কলা, পেঁপে, কুমড়াসহ মৌসুমি ফলদ বৃক্ষ উৎপাদন করা যাবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ বলেন, উপজেলায় পাইলটিং আকারে কচুরিপানা থেকে জৈব সার উৎপাদন করা হচ্ছে। উপজেলার ২০টি স্থানে বড় পরিসরে এই জলকমল জৈব সার উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সারা দেশে এটি ছড়িয়ে দেওয়ার আশা তাঁর।