তিন বছর ধরে মোজাম্মেল হোসেনের আমগাছে বাঁধা বিদ্যুতের তার খুলে নিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন। সোমবার রাজশাহীর পবা উপজেলার মুরারীপুর গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

প্রতিনিধি রাজশাহী: মোজাম্মেল হোসেনের আমগাছটির মুক্তি মিলেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন এসে গাছটির বাঁধন খুলে দিয়েছেন। তিন বছর পর আজ সোমবার সকাল ৯টায় গাছের কাছে এসে হেসে ওঠেন মোজাম্মেল। এত দিন তাঁর মনে হয়েছে, গাছটিকে চোরের মতো বেঁধে রাখা হয়েছিল। গাছের সঙ্গে বেঁধে বিদ্যুৎ লাইনের তার টানা দেওয়া হয়েছিল।

মোজাম্মেল হোসেনের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার মুরারীপুর গ্রামে। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়কের দক্ষিণ পাশে তাঁর বাড়ির অবস্থান। সেখানেই তাঁর ক্ষীরশাপাতি জাতের আমের গাছটি। এই জাতের আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি বাংলাদেশের একটি উৎকৃষ্ট জাতের আম। স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। বাজারে এই আমের চাহিদাও বেশি। প্রতিবছর গাছটিতে ১০ থেকে ১২ মণ আম ধরত। বিদ্যুতের তার দিয়ে বাঁধার পর থেকেই আম ধরা কমে গেছে। এ বছর গাছটিতে একটি আমও ধরেনি। মোজাম্মেল হোসেনের ধারণা, বিদ্যুতের তার বাঁধার কারণেই গাছটিতে আম ধরা বন্ধ হয়ে গেছে।

আমগাছটির সঙ্গে বিদ্যুৎ লাইনের টানা দেওয়া তার খুলে খুঁটি পুঁতে সেই তার টানা দেওয়া হচ্ছে। আজ সোমবার সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার মুরারীপুর গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

মোজাম্মেল হোসেনের ভাষ্য, বিদ্যুতের লাইন করার সময় বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন বলেছিলেন, কিছুদিন পরে তাঁরা এসে গাছ থেকে তার খুলে দিয়ে যাবেন। তিন বছরেও তাঁরা আর আসেননি।

এ বছর গাছে একটি আমও ধরেনি দেখে কৃষক মোজাম্মেল বিচলিত বোধ করেন। তিনি স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করেন। তাঁরা বলেছেন, তাঁদের প্রকৌশলী ঢাকায় গেছেন। তিনি ফিরলে একটা ব্যবস্থা হবে। সে–ও এক মাস পার হয়ে গেছে। এরপর কেউ আর খোঁজ নিতেও আসেননি।

আসলেই কি এভাবে তার জড়িয়ে রাখলে গাছের কোনো ক্ষতি হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক উদ্ভিদবিজ্ঞানী এম মনজুর হোসেন মুঠোফোনে বলেন, গাছের বাকলের নিচেই থাকে ‘ফ্লোয়েম টিস্যু’, যার মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অংশে খাদ্য যায়। তার দিয়ে বেঁধে রাখার কারণে এই টিস্যুর ক্ষতি হচ্ছে। ফলে গাছ খাদ্য পাচ্ছে না। এ জন্য আম ধরছে না। কৃষকের ধারণা ঠিক আছে।

তিন বছর ধরে এভাবেই আমগাছের সঙ্গে বিদ্যুতের তার বেঁধে রাখা হয়েছিল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান গাছটির অবস্থান জানতে চেয়ে বলেন, ‘আমি কৃষির দায়িত্বে আছি। আমগাছ তো আমাকেই দেখতে হবে।’ এরপর তিনি রাজশাহীতে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গতকাল রাতেই মুরারীপুরের পাশে বিদ্যুৎ অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হককে ফোন করে বিষয়টি জানান।

এ বিষয়ে গতকাল রাতে প্রকৌশলী মোজাম্মেল হকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সোমবার সকালেই তিনি গাছটিকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করবেন।

আজ সকাল ৯টায় বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন গিয়ে আমগাছের সঙ্গে বাঁধা তার খুলে দেন। পরে গাছের পাশেই একটি জায়গায় আলাদা খুঁটি পুঁতে বিদ্যুৎ লাইনের তার টানা দেন। গাছের কাছে গিয়ে দেখা গেল, গাছের মালিক মোজাম্মেল হোসেন গাছের বাকল কেটে তার ঢুকে যাওয়া অংশে হাত বোলাচ্ছেন। তাঁর মুখের অভিব্যক্তি দেখে বোঝা গেল তিনি খুশি হয়েছেন।