দেশেই ব্যবহৃত হচ্ছে মালামাল, কর্মকর্তারা দেখতে যাবেন চীনে

সিরাজগঞ্জ জেলার মানচিত্র

প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে বিসিক শিল্পপার্কে গ্যাস–সংযোগের লাইন নির্মাণের জন্য চীন থেকে বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। সেই সরঞ্জাম দিয়ে গত ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজও শেষের দিকে। অথচ এখন এসে সরঞ্জাম কেনার ‘ফ্লোর ইন্সপেকশনে’ চীন যাচ্ছেন পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (পিজিসিএল) কর্মকর্তারা। 

সাধারণত কোনো প্রকল্পের সরঞ্জাম কেনার আগে দেখতে যাওয়াকে ‘ফ্লোর ইন্সপেকশন’ বলা হয়। অথচ সরঞ্জাম এনে ব্যবহার করার পর সরকারি খরচে এই বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

গত ১৫ মে সরকারি আদেশে (জিও) এই বিদেশ সফরের অনুমোদন দেওয়া হয়। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপসচিব (বাজেট অধিশাখা) খাদিজা তাহেরা ববি এতে স্বাক্ষর করেছেন। ৩০ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত অথবা তার কাছাকাছি কোনো সময়ে ভ্রমণকালসহ মোট ১২ দিন তাঁরা এই পরিদর্শনে কাটাতে পারবেন। তবে ২৮ জুন পর্যন্ত সফরে যাননি অনুমতি পাওয়া কর্মকর্তারা। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এই সফরে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে পিজিসিএল সূত্রে জানা গেছে। 

পিজিসিএল সূত্রে জানা যায়, ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিরাজগঞ্জের সায়েদাবাদ এলাকায় ‘বিসিক শিল্পপার্ক-সিরাজগঞ্জ’ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে গ্যাস-সংযোগের জন্য পাইপলাইন নির্মাণ বাবদ ব্যয় হচ্ছে ২১ কোটি টাকা। ডন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করছে। ডিসেম্বর থেকে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এই কাজের জন্য লাইন পাইপ, ফিটিংস, কোটিং উপকরণসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে। 

গত মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের সায়েদাবাদ এলাকায় চার লেনের রাস্তা ও রেললাইনের নিচ দিয়ে গ্যাস সঞ্চালনের লাইন স্থাপনের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। এই লাইনের মাধ্যমে গ্যাস যাবে বিসিক শিল্পপার্কে। 

এই কাজের সরঞ্জাম কেনার ‘ফ্লোর ইন্সপেকশনে’ যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন ও পিজিসিএলের ৯ জন কর্মকর্তা। তাঁরা হচ্ছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিস্টেম অ্যানালিস্ট কবির উদ্দিন, পিজিসিএলের মহাব্যবস্থাপক মো. সাইদুল ইসলাম, শৈলজা নন্দা বসাক ও শাহিনুর আলম; উপমহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম ও এইচ এম জুলফিকার; ব্যবস্থাপক আক্তারুজ্জামান খান ও অলি উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক সৈকত মাহমুদ এবং সহকারী প্রকৌশলী কিশলয় মিত্রা। 

সরকারি আদেশে সফরের শর্তে বলা হয়েছে, ভ্রমণকালে এই কর্মকর্তারা দায়িত্বরত বলে গণ্য হবেন। প্রাপ্য ভাতা তাঁদের স্থানীয় মুদ্রায় নিতে হবে। এর কোনো অংশই বৈদেশিক মুদ্রায় উত্তোলন করা যাবে না। অনুমোদিত মেয়াদের বাইরে তাঁরা বিদেশে অবস্থান করতে পারবেন না। এই ভ্রমণের সব খরচ আয়োজক সংস্থাকে (পিজিসিএল) বহন করতে হবে। সফর থেকে ফেরার সাত দিনের মধ্যে পরিদর্শনের ব্যাপারে তাঁদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে হবে। 

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধের বিষয়ে ২০২২ সালের ১২ মে পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এক্সপোজার ভিজিট, শিক্ষাসফর, এপিএ, ইনোভেশনের আওতামুক্ত ভ্রমণ, ওয়ার্কশপ বা সেমিনারে অংশগ্রহণসহ সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। এ আদেশ উন্নয়ন বাজেট ও পরিচালন বাজেট উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। 

পিজিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মুহিবুর রহমান গত রোববার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, তিনি সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্কের জন্য ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন নির্মাণ, কোটিং ম্যাটেরিয়ালস ও অন্যান্য ফিটিং পরিদর্শন করেছেন। অর্থাৎ চীন থেকে আমদানি করা এসব মালামাল ব্যবহার করে নির্মাণকাজ চলছে। 

এ অবস্থায় চীন সফরে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মুহিবুর রহমান বলেন, মালামাল আনা হয়েছে, এটা ঠিক। তবে আরও কিছু মালামাল আসবে। নিয়ম অনুযায়ী, মালামাল ক্রয়ের আগে পরিদর্শনে যেতে হয়, তাহলে এখন কেন যাচ্ছেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি এই সফরে যাচ্ছেন না। তাঁদের পরিদর্শন খরচ প্রকল্পের ভেতরে ধরা আছে।

এ সময় পরিদর্শনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে পিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুখসানা নাজমা ইসহাক মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, ‘কে বলল, এটা আপনাকে?’ পরিদর্শনের জন্য সরকারি আদেশ জারির বিষয় উল্লেখ করে তিনি আবার প্রশ্ন করেন, কাজ শেষের পথে এ কথা কে বলেছেন? নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে বলে জানালে তিনি বলেন, ‘আমি বগুড়ায় একটা মিটিংয়ে আছি। আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে অফিসে আসেন।’ 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে গ্যাস-সংযোগের লাইন নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে (সাইট ইঞ্জিনিয়ার) আছেন নিয়ামত হোসেন। তিনি বলেন, যে গতিতে কাজ হচ্ছে, এভাবে চললে আর এক মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে বৃষ্টি বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে সময় বেশি লাগতে পারে।