সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হককে ‘হত্যার পরিকল্পনায়’ জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সোহাগ মিয়া | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হককে (ব্যারিস্টার সুমন) ‘হত্যার পরিকল্পনায়’ জড়িত থাকার অভিযোগে সোহাগ মিয়া (২৭) নামের এক তরুণকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করার জন্য তাঁর (সায়েদুল হক) জীবন ঝুঁকিতে আছে বলে গল্প সাজিয়েছিলেন সোহাগ মিয়া।
বুধবার বিকেলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সিলেট মহানগর এলাকা থেকে সোহাগ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সোহাগ মিয়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের বাসিন্দা।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন বলেন, পুলিশ তদন্ত করে প্রমাণ পেয়েছে, সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হককে ‘হত্যার পরিকল্পনার’ কাহিনি ছিল আটক সোহাগের সাজানো গল্প। তিনি এই কাহিনি তৈরি করে সংসদ সদস্যের আস্থাভাজন হওয়ার পাশাপাশি তাঁর কাছ থেকে অর্থ উপার্জন করতে চেয়েছিলেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আটক সোহাগ গত ২৮ জুন রাতে নিজের পরিচয় অজ্ঞাত রেখে চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায়কে হোয়াটসঅ্যাপে কল করে তাঁর কাছে সংসদ সদস্য সায়েদুল হকের ফোন নম্বর চান। তখন ওসি তাঁর কাছে নম্বর কেন প্রয়োজন, সেটি জানতে চান। উত্তরে তিনি জানিয়েছিলেন সংসদ সদস্যের সঙ্গে তাঁর জরুরি কথা আছে। ওসি সংসদ সদস্যের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁকে ফোন নম্বর দেননি। কিছুক্ষণ পরই তিনি হোয়াটসঅ্যাপে একটি খুদে বার্তা পাঠান এবং পরে তা মুছে (ডিলিট) দেন। এর কিছুক্ষণ পর তিনি আরেকটি খুদে বার্তা পাঠান। সেখানে লেখা ছিল, ‘ব্যারিস্টার সুমনের কিছু শত্রু আছে, যাঁরা তাঁর ক্ষতি করতে পারে।’ এটিও পরে তিনি মুছে দেন।
পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন বলেন, ‘শুরু থেকে আমরা ওই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির সন্ধানে কাজ করি। তাঁর পরিচয়ও আমরা শনাক্ত করি। ওই ব্যক্তিই আটক হওয়া সোহাগ। তাঁকে আটক করতে পুলিশ দেশের নানা স্থানে অভিযান চালায়। কিন্তু তিনি দ্রুত স্থান পরিবর্তন করতে থাকেন। অবশেষে গতকাল দুপুরে সিলেটের মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে তাঁকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ।’
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, সোহাগ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি ২০১১ সালে কাজের সন্ধানে বিদেশে যান। সেখানে সাত বছর অবস্থানের পর ২০১৮ সালে দেশে ফিরে আসেন। এরপর এলাকার ১০ থেকে ১২ জনের কাছ থেকে পর্তুগাল নেওয়ার কথা বলে জনপ্রতি ৮ থেকে ১০ লাখ করে টাকা নেন। কিন্তু তাঁদের বিদেশে পাঠাতে ব্যর্থ হয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। প্রায় এক বছর সেখানে থাকার পর দেশে ফিরে আসেন। দেশে আসার পর আর্থিক অভাব-অনটনে পড়েন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রথমে হ্যাকার হওয়ার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি ইন্টারনেটে হ্যাকিং বিষয়ে ধারণা নিয়ে ডার্ক ওয়েবসাইট ব্যবহার শুরু করেন।
পুলিশ সুপার দাবি করেন, ভারতীয় একটি গল্প পড়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জীবনে হুমকি আছে তথ্য দিয়ে প্রতারণার কৌশল জানতে পারেন। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সায়েদুল হকের ওপর হুমকি আছে এমন ভিডিও ক্লিপ দেখতে পান সোহাগ। তখন তিনি তাঁর (সংসদ সদস্য) আস্থাভাজন হয়ে প্রতারণা করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু সংসদ সদস্যের ফোন নম্বর না থাকায় তিনি চুনারুঘাটের ওসির কাছে ফোন করে নম্বর চান।
ওসি হিল্লোল রায় বলেন, আটক সোহাগের ধারণা ছিল, জীবন হুমকিতে আছে বললেই সংসদ সদস্য তাঁর কাছে দুর্বল হয়ে পরিকল্পনাকারীদের নাম জানতে চাইবেন। তখন তিনি কৌশলে অর্থ আদায় করবেন। সোহাগ নিজেই বিষয়টি পুলিশকে নিশ্চিত করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করবে পুলিশ।
এ ঘটনায় গত ২৯ জুন সন্ধ্যার পর রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সংসদ সদস্য সায়েদুল হক। জিডিতে তিনি দাবি করেন, চুনারুঘাট থানার ওসির কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, তাঁকে হত্যার জন্য চার থেকে পাঁচজনের অজ্ঞাতনামা একটি দল মাঠে নেমেছে। এ অবস্থায় তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ ঘটনায় চুনারুঘাট থানা-পুলিশও একটি জিডি করে। হবিগঞ্জ পুলিশের পাশাপাশি পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও এ ঘটনার তদন্ত করা হয়। হুমকির ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সায়েদুল হকের নিরাপত্তায় একজন গানম্যান নিয়োজিত করা হয়।