সিলেটে ছাত্রলীগের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া, শিক্ষার্থীদের মেসে মেসে হামলা

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ চলাকালে সিলেটের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেন। বিকেল চারটার দিকে ছবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক থেকে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি সিলেট: সিলেটে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের ঠেকাতে ছাত্রলীগ আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, রড, হকিস্টিক, চাকু ও লাঠি হাতে মহড়া দিয়েছে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে অবস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেসে হামলা চালান। পাশাপাশি তাঁরা সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও ধাওয়া দেন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে চারটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত ছাত্রলীগের এ মহড়ার ঘটনা ঘটে। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বেলা পৌনে চারটার দিকে নগরের মদিনমার্কেট এলাকা থেকে জেলা, মহানগর এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী সংঘবদ্ধভাবে মিছিল করে শাবিপ্রবির দিকে রওয়া হয়। এ মিছিলে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কিছু নেতা-কর্মীকেও দেখা গেছে।

মিছিল চলাকালে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের চারজন নেতা-কর্মীর হাতে চারটি আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। পাশপাশি অনেকের হাতেই ছিল রামদা, রড, হকিস্টিক, চাকু, লোহার পাইপ ও লাঠি। অস্ত্রধারীদের মধ্যে একজন ছিলেন সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি পিযুষ কান্তি দে। অন্য সবার মাথায় হেলমেট থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

শাবিপ্রবিগামী বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগরের সভাপতি কিশওয়ার জাহান, সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ, সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহেল আহমদ প্রমুখ। এ সময় শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারাও ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মিছিলটি নগরের আখালিয়া এলাকায় পৌঁছামাত্র একদল সাধারণ শিক্ষার্থীকে দেখে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ধাওয়া দেন। এ সময় তাঁরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করেন। পরে তাঁরা মিছিল নিয়ে বিকেল ৪টার দিকে শাবিপ্রবির প্রধান ফটকে যান। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে চাইলে পুলিশ বাধা দেন। এ সময় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে।

পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ত্রেমুখী এলাকায় অবস্থান নেন। এর অন্তত ১৫ মিনিট পর পুনরায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এসে আশপাশে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মেসে মেসে ইটপাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সুরমা ইউনিলিভার মেস, আমির কমপ্লেক্স ভবন ও তপোবন এলাকার বিভিন্ন মেসে হামলা চালান। তাঁদের হামলায় আমির কমপ্লেক্স ভবনের বাসিন্দা এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মাথা ফেটেছে।

বিভিন্ন মেসে ভাঙচুর চালানোর সময় শাবিপ্রবির পার্শ্ববর্তী তপোবন ও সুরমা আবাসিক এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের দেখে ধাওয়া দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী প্রতিরোধের চেষ্টা চালান। তবে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উপর্যুপরি ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও তাঁদের মিছিল থেকে ছোড়া আগ্নেয়াস্ত্রের গুলির কারণে একপর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পিছু হটেন।

যোগাযোগ করলে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ কাছে দাবি করেন, তাঁরা শিক্ষার্থীদের কোনো মেসে হামলা চালাননি। এমনকি তাঁদের মিছিলে কেউ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছিল কি না, সেটাও তাঁরা দেখেননি। কেবল তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাবিপ্রবির ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিলেন, তবে পুলিশের বাধা পেয়ে ফিরে আসেন। ফেরার পথে সুরমা ও তপোবন এলাকায় কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের মিছিলে হামলা চালানোর চেষ্টা করলে তাঁরা ধাওয়া দিয়ে তাঁদের তাড়িয়ে দেন।

ছাত্রলীগের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া ও গুলি ছোড়ার বিষয়ে বক্তব্য জানতে সিলেটের পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান ও উপকমিশনার (উত্তর) মো. আজবাহার আলী শেখকে একাধিকবার কল করলেও তাঁরা রিসিভ করেননি। তাই তাঁদের বক্তব্য জানা যায়নি।

এর আগে বেলা সোয়া ১টার দিকে শাবিপ্রবির প্রধান ফটকের সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হন।