সাকিব আল হাসান | আইসিসি |
খেলা ডেস্ক: ‘কাউকে জবাব দেওয়ার জন্য খেলি না’—নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কাল বাংলাদেশের জয়ের পর সাকিব আল হাসানের এ কথাটাই তো আসলে সমালোচকদের উদ্দেশে দেওয়া উচিত জবাব। ব্যাট আর বল যখন সাকিবের হয়ে কথা বলে, তখন এর চেয়ে বেশি কিছু বলার প্রয়োজনও নেই তাঁর।
আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে সর্বশেষ ১৯ ম্যাচে অর্ধশত ছিল না সাকিবের। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বশেষ ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ২০২১ সালে। এবারের বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচে বল করেছিলেন মাত্র ৪ ওভার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪ বলে ৮ আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪ বলে ৩ রানের ইনিংস দেখে মনে হয়েছিল, ব্যাটিংটাই তিনি ভুলে গেছেন। এসবের ফলশ্রুতিতে টি–টোয়েন্টি অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান থেকে একঝটকায় নেমে যান পাঁচে।
সবখানে যখন ‘সাকিব ফুরিয়ে গেছেন, সাকিব ফুরিয়ে গেছেন’ রব, তখনই তিনি আবার স্বমহিমায়। সেন্ট ভিনসেন্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কাল বাংলাদেশের ২৫ রানের জয়ে ৪৬ বলে অপরাজিত ৬৪ রান করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন সাকিব।
বোলিংও খুব একটা খারাপ করেননি। এবারের আসরে প্রথমবার বোলিং কোটা পূরণ করে দিয়েছেন ২৯ রান। প্রথম ২ ওভারে ১৯ রান দিলেও শেষ ২ ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে ডাচ ব্যাটসম্যানদের বেশ চাপে রেখেছেন।
সাকিব এভাবে ফিরবেন আর কোনো রেকর্ড গড়বেন না—এমনটা খুব কমই হয়। কাল ৪৭ রানে পৌঁছাতেই বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার যে কীর্তি গড়েছেন, তা আর কারও নেই।
সাকিবই এখন একমাত্র ক্রিকেটার, যাঁর দুই ধরনের (ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি) বিশ্বকাপেই কমপক্ষে ৮০০ রান ও ৪০ উইকেট আছে। পাঁচবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলা সাকিবের রান ১৩৩২, উইকেট ৪৩টি। আর মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসাবে (অন্যজন ভারতের রোহিত শর্মা) সব কটি টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা সাকিবের এই প্রতিযোগিতায় রান ৮১৭, উইকেট ৪৩টি। অদূর ভবিষ্যতে এই কীর্তিতে কারও সাকিবের সঙ্গী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
কালকের ম্যাচসেরার পুরস্কারটি ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সাকিবের ৪৫তম। এখন পর্যন্ত টেস্টে ৬, ওয়ানডেতে ২৭ ও টি–টোয়েন্টিতে ১২ বার ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পেয়েছেন।
সাকিবের ওপরে যে ৬ জন আছেন, তাঁরা ক্রিকেট ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র—শচীন টেন্ডুলকার (৭৬), বিরাট কোহলি (৬৬), সনাৎ জয়াসুরিয়া (৫৮), জ্যাক ক্যালিস (৫৭), কুমার সাঙ্গাকারা (৫০) ও রিকি পন্টিং (৪৯)। কোহলি ছাড়া বাকিরা অনেক আগেই খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বলেছেন।
এখানেই শেষ নয়। আইসিসি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সর্বশেষ ১২ জয়ের ৮টিতেই ম্যাচসেরা হয়েছেন সাকিব। কাল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের আগে, ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা, ২০২১ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমান ও পাপুয়া নিউগিনি, ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তান এবং ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছিল তাঁর হাতে।
বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ২৯ ম্যাচ জিতেছে। এর মধ্যে ২৭টিই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের অভিষেকের পর। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সাকিব ম্যাচসেরা হয়েছেন ৯ বার।
বিসিবির ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের আয়োজন ‘দ্য গ্রিন রেড স্টোরি’তে সাকিব জানিয়েছিলেন, এবারের বিশ্বকাপে ভালো করে আরেকটি বিশ্বকাপে খেলতে চান।
ভালো করার শুরুটা নিশ্চয় গতকালের নেদারল্যান্ডস ম্যাচ দিয়েই হয়েছে। ছন্দটা ধরে রাখতে পারলে তিনি ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর ২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও খেলবেন। মানে, কমপক্ষে আরও দুটি বৈশ্বিক আসরে খেলার সম্ভাবনা আছে তাঁর।
সাকিব যত বেশি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে খেলবেন, ম্যাচসেরা হওয়ার সম্ভাবনাও
বাড়বে তত বেশি। তিনি ম্যাচসেরা হওয়া মানে তো বাংলাদেশেরই আরেকটি অর্জন।
সমর্থকেরা তাই বলতেই পারেন, সমালোচনা থেকে যদি সাকিবের ভালো কিছু হয়; তাহলে
সমালোচনাই ভালো!