উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রসহ চাপাতি ও পাইপ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। শনিবার সকালে বাঘা উপজেলা চত্বর এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বাঘা: রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আজ রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে গতকাল শনিবার সকালে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে আজ ভোর পর্যন্ত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ।

আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম আছেন।তিনিসহ আটক সাতজন পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সমর্থক বলে জানা গেছে। তবে পুলিশ সবার পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানায়নি।

আজ সকালে অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. রফিকুল আলম বলেন, তাঁরা ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত সাতজনকে আটক করেছেন। এখন পর্যন্ত কেউ মামলা করেননি। তবে আজকেই মামলা হয়ে যাবে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

এদিকে গতকালের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন। আজ তাঁর অস্ত্রোপচার করার কথা। হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, আশরাফুল ইসলামের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। আশঙ্কা কেটে গেছে।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে উপজেলা চত্বরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের মানববন্ধনের আয়োজন করে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ শাখা। এ পক্ষের কর্মসূচি ছিল পৌর মেয়র আক্কাছ আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করা। এ পক্ষের লোকজন সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের নেতা-কর্মী হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে অপর পক্ষ বাঘা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক সমিতির নামে ক্রেতাদের কাছ থেকে জোর করে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে। তাদের ব্যানারে আয়োজক হিসেবে লেখা ছিল ‘বাঘা উপজেলা সচেতন নাগরিকবৃন্দ’।

এই পক্ষ স্থানীয় সংসদ সদস্যের মৌখিকভাবে গঠিত কমিটিকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল। এতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লায়েব উদ্দিন (লাভলু), পাকুড়িয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম প্রমুখ। এই পক্ষ গত নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রাহেনুল হকের হয়ে কাজ করেছেন। নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গতকাল পৌনে এক ঘণ্টার মতো দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল বোঝাই বাজার ব্যাগ, চাপাতি, পাইপ, চায়নিজ কুড়াল দেখা গেছে। দুই পক্ষের অনেকের মাথায় হেলমেটও ছিল। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। লাঠিপেটা করেছে।

স্থানীয় সূত্র জানা যায়, এই সংঘর্ষের সূত্রপাত গত ১০ জুন। সে দিন বাঘা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক সমিতির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে ২০ জুন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করে উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রের পক্ষ। এতে বাঘার দলিল লেখকসহ হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা অংশ নেন।

মামলার বিষয়ে আজ সকালে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস বলেন, তাঁরা মামলা করবেন। তাঁদের একজন নেতা হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য পৌর মেয়র আক্কাছ আলীর মুঠোফোনে কল করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে গতকাল জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম বলেছিলেন, তাঁরাও মামলা করবেন।