প্রতিনিধি গুরুদাসপুর: তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ৭২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৬টি কেন্দ্রের ফলাফল শিট বদলে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন পরাজিত দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী। বিজয়ী প্রার্থীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ওই কর্মকর্তারা ফলাফল পাল্টে দেন বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।
গুরুদাসপুর পৌর শহরের একটি বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পরাজিত প্রার্থীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করা হয়। এদিকে ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচন ও অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবিতে আজ শুক্রবার গুরুদাসপুরে মানববন্ধন করেছেন পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকেরা।
অভিযোগকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরকার এমদাদুল হক মোহাম্মদ আলী (মোটরসাইকেল) ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিয়ার রহমান (আনারস)। ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আহম্মদ আলী ২০ হাজার ৩৫৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার এমদাদুল হক ১৯ হাজার ৭৫৯ ও আতিয়ার রহমান ১৯ হাজার ৯০৩ ভোট পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফ হোসেনের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি। তবে গতকাল তিনি পরাজিত প্রার্থীদের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাঁর কাছে ৭২টি কেন্দ্রের ফলাফলের শিট ছিল। প্রার্থীদের সেগুলোর ছবি তোলার সুযোগও দেওয়া হয়েছিল। আসলে অল্প ভোটে পরাজিত হওয়ায় তাঁদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করা হয়েছে। কোনো প্রার্থীর পক্ষ নেওয়ার সুযোগ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে সরকার এমদাদুল হক মোহাম্মদ আলী বলেন, তিনি ৫৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো এমন ন্যক্কারজনক ভোটের পরিবেশ দেখেননি। অথচ দল এখন ক্ষমতায়। ভোটের সঙ্গে যুক্ত কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে ভোটের নিরপেক্ষতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে। এবারের ভোটে বিএনপি-জামায়াত ও জাতীয় পার্টি অংশ নেয়নি। এরপরও অনিয়ম ও কারচুপি কিসের স্বার্থে? আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা হিসেবে তিনি লজ্জিত ও দুঃখিত।
সরকার এমদাদুল হক মোহাম্মদ আলী অভিযোগ করেন, ভোট গ্রহণে যুক্ত কিছু অসাধু কর্মকর্তা জয়ী প্রার্থীর থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পক্ষপাতমূলক ভোট নিশ্চিত করেছেন। ৭২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬টি কেন্দ্রের ফলাফলের শিটে কারচুপি করা হয়েছে। প্রকৃত জয়ী প্রার্থী জনগণের রায় থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ বিষয়ে আপত্তি তুলেও কাজ হয়নি। গণতন্ত্র রক্ষা ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একই সঙ্গে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান।
পরাজিত আরেক প্রার্থী আতিয়ার রহমান বলেন, ‘শুরু থেকেই কেন্দ্রগুলো জয়ী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের দখলে ছিল। প্রশাসন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। বেশির ভাগ কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ফলাফলের শিট সরবরাহ করা হয়নি। ফলাফল প্রকাশের সময় প্রজেক্টর বন্ধ ছিল। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ফলাফল ঘোষণার কথা থাকলেও নানা নাটকীয়তার পর আগে তৈরি করা ফলাফল রাত ১১টায় ঘোষণা করা হয়েছে। ৭২টি কেন্দ্রের ফলাফলের শিট দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হলে ফলাফল কেন্দ্রে কর্মী-সমর্থকদের লাঠিপেটা করা হয়। এতে ভোটাধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ওই দুই প্রার্থীর অভিযোগের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে আরও তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. আলাল শেখ (চশমা), উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ন কবির (টিয়া পাখি) ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকসানা আকতার (বৈদ্যুতিক পাখা)। সংবাদ সম্মেলনে তাঁরাও একই ধরনের অভিযোগ করেন।
এদিকে ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচন ও অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবিতে আজ শুক্রবার গুরুদাসপুরে মানববন্ধন করেছেন পরাজিত প্রার্থীদের সমর্থকেরা। বিকেল চারটার দিকে উপজেলার বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের কাছিকাটা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।