চলনবিলের নতুন পানিতে নৌকায় করে আনন্দে মেতেছে তরুণ-তরুণীরা। শনিবার দুপুরে চাঁচকৈড় নন্দকুঁজা নদীতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি গুরুদাসপুর: আষাঢ়ের শুরুতেই চলনবিল ও এর আশপাশের নদীগুলোতে নতুন পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তরুণরা দল বেঁধে নতুন পানিতে নৌকা বিনোদনে মেতেছেন। অনেকে আবার পরিবার–পরিজন নিয়েও বের হচ্ছেন। ঈদ–পরবর্তী সময়ে বাড়তি বিনোদন হিসেবে নৌকা বিনোদনে মেতেছেন বলে জানান তাঁরা।

শনিবার সকালে বিলপাড়ের চাঁচকৈড় বাজার ঘাটে একদল তরুণ–তরুণীকে শব্দযন্ত্র নিয়ে স্থানীয় নন্দকুঁজা নদীতে উন্মাদনায় মেতে থাকতে দেখা গেছে। পাশাপাশি আরও তিন থেকে চারটি নৌকায় পরিবার–পরিজন নিয়ে দেখা গেছে। তাদেরও সবার গন্তব্য চলনবিল।

পাশের চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা গ্রাম থেকে তরুণ-তরুণীদের নৌকাটি এসেছে চাঁচকৈড়ে। নৌকায় থাকা সাব্বির হোসেন, জানে আলমসহ কয়েকজন তরুণের ভাষ্য, গত কয়েক মাস চলনবিলসহ বিলের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোতে পানি ছিল না। তার ওপর প্রচণ্ড দাবদাহ সহ্য করতে হয়েছে। এতে জীবন হয়ে ওঠে ওষ্ঠাগত।

ঈদের আনন্দ উপভোগ আর নতুন পানির সান্নিধ্য পেতেই বন্ধুরা মিলে নৌকাভ্রমণে বের হয়েছেন।  ৩০ জন সমমনা বন্ধু এবং আটজন সহপাঠী তরুণী রয়েছেন বলে জানান তাঁরা। তাঁদের দেওয়া তথ্য মতে, ভ্রমণের জন্য নৌকা-শব্দযন্ত্র ভাড়া, দুপুরের খাবার, বিকেলের নাশতাসহ ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। সবার অংশগ্রহণে এই খরচের টাকার জোগান দেওয়া হয়েছে।

ভ্রমণ কমিটির দলনেতা সাব্বির হোসেন জানান, সকাল ৯টার দিকে ছাইকোলা ঘাট থেকে নৌকাটি যাত্রা শুরু করে। গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় ঘাটে কিছু কেনাকাটার জন্য যাত্রাবিরতি দেওয়া হয়েছে। পরের গন্তব্য চলনবিল। বিলের মধ্যে নৌকা ভাসিয়ে নতুন পানিতে ডুবসাঁতারসহ চলবে দুপুরের রান্না।

পড়ন্ত বিকেলে বিলের পানিতে নৌকা ভাসিয়ে চলবে নাচানাচি, হইহুল্লোড় আর মাস্তিতে মেতে উঠবেন সবাই। সন্ধ্যার পর গন্তব্যে পৌঁছাবে তাঁদের নৌকাটি। তাঁদের মতো অসংখ্য তরুণ-তরুণী বর্ষায় চলনবিলে নৌকাভ্রমণে বের হয়েছেন।

সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে নৌকাভ্রমণে এসেছেন চাঁচকৈড় মধ্যপাড়া মহল্লার জাকির হোসেন। সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আরও তিনটি পরিবারের ১২ জন। জাকির হোসেনের ভাষ্য, বছরজুড়েই নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় তাঁকে। পরিবারকে সময় দিয়ে পারেন না। ঈদের পর পরিবারের সদস্যদের সময় কাটানো ও বাড়তি বিনোদন দিতেই চলনবিলে নৌকাভ্রমণে বের হয়েছেন তিনি। দিনভর চলনবিলে নৌকায় ভেসে বেড়ানোর পর সন্ধ্যায় ঘরে ফিরবেন তাঁরা।

চলনবিলের পর্যটন এলাকা বলে খ্যাতি রয়েছে গুরুদাসপুরের খুবজীপুর ইউনিয়নের বিলশা এলাকার। খুবজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম জানান, খুবজীপুরের চলনবিল জাদুঘর এবং বিলের মাঝে গড়ে ওঠা বিলশা গ্রামকে পর্যটন এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তাঁর চাচা প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস। কারণ বর্ষায় চলনবিলকে ঘিরে দেশের নানা প্রান্ত থেকে  মানুষ বিনোদন নিতে আসে এই বিলশা গ্রামে। চলনবিলের উন্মুক্ত জলরাশিতে নৌকায় ভেসে বেড়ানো, ডিঙি নৌকায় জেলেদের মাছ ধরা আর রাতে বিলের পানিতে জ্যোৎস্নার আলোকছটা উপভোগ করে থাকে বিনোদন ও ভ্রমণপিপাসুরা।

ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুলের দেওয়া তথ্যমতে, বিলে এখনো পুরোপুরি পানি আসেনি। বিলে টইটম্বুর পানি দেখতে হলে মাসখানেক অপেক্ষা করতে হবে। এর মধ্যে কিছু মানুষ বিলের নতুন পানিতে নৌকা ভাসিয়ে বিনোদনে মেতে উঠেছে। চলনবিলে পুরোপুরি পানি এলে বাড়বে ভ্রমণ নৌকা ও পর্যটকের সংখ্যা।

সব ঋতুতে চলনবিলের মূল আকর্ষণ নৌকাভ্রমণ | ফাইল ছবি

প্রসঙ্গত, নাটোর-পাবনা ও সিরাজগঞ্জের আট উপজেলা নিয়ে গঠিত চলনবিলের আয়তন ৯২৫ বর্গমাইল। তবে দখল-দূষণ, ভরাট এবং বিলের মধ্য দিয়ে রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি তৈরি হওয়ায় চলনবিলের আয়তন কমে যাচ্ছে। ফলে চলনবিল হারিয়েছে তার ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য।