নাতির কোলে কেন্দ্রে এসে ভোট দিলেন ৯০ ছুঁই ছুঁই হালিমা বেওয়া। বুধবার দুপুরের রাজশাহীর চারঘাটের ফতেহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি রাজশাহী: হালিমা বেওয়ার বয়স ৯০ বছর ছুঁই ছুঁই। শরীর চলে না। বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বালুদিয়াড় গ্রামে। ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করে মধ্যদুপুরে কেন্দ্রে এসে আজ তিনি ভোট দিলেন। নিজে চলাফেরা করতে পারেন না। তাই নাতি রুবেল রানার কোলে চড়ে এলেন ভোটকেন্দ্রে। নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের ফতেহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে আজ। সকাল থেকে ভোট চলছে চারঘাট উপজেলায়। হালিমা বেওয়ার বাড়ি ভোটকেন্দ্র থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। সেখান থেকে শাহাবুল ইসলাম নামের এক ভ্যানচালক তাঁকে কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন। বিদ্যালয় মাঠ থেকে কোলে করে কেন্দ্রে নিয়ে যান নাতি রুবেল রানা। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে আনসার সদস্যরা তাঁকে সহযোগিতা করেন। তাঁকে ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে দিয়ে আসেন তাঁরা।
ভোটকেন্দ্রে নিজে নিজে সিল মেরে বাক্সে ব্যালট ফেলেন হালিমা বেওয়া। তিনি বলেন, ‘ভোট দেওয়ার জন্য সকাল থেকে ছটফট করেছি। নাতিকে বলেছি আনেনি। পরে ভ্যানে করে নিজেই এসেছি। ভোট দেওয়ার পর ভালো লাগছে। আমি পছন্দের মানুষকে ভোট দিয়েছি। ভোট দিতে কোনো কষ্ট হয়নি।’
রুবেল রানা বলেন, ‘ভোট দেওয়ার জন্য তাঁর দাদি সকালে আবদার করেছিলেন। পরে তিনি ভ্যানে করে আসেন। দাদির সাত সন্তান। ছয় ছেলে, এক মেয়ে। পাঁচ ছেলে বেঁচে আছেন। তিনি একা স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটতে পারেন না। বাড়িতে লাঠিতে ভর করে নড়াচড়া করেন। তবে চোখের দেখার শক্তি এখনো ভালো। দাদিকে কোলে করে ভোট দেওয়াতে পেরে ভালো লাগছে। তাঁর শখটা পূরণ হলো।’
ভ্যানচালক শাহাবুল বলেন, তাঁর সম্পর্কে ফুফু হন হালিমা বেওয়া। ভোট দেওয়ার কথা বলায় তিনি ভ্যানে করে নিয়ে এসেছেন। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ভোটের পরিবেশ ভালো। হালিমা বেওয়াদের মতো ভোটারদের কেন্দ্রে দেখে অনেকেই ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ হবেন। তাঁর কেন্দ্রে ভোটার ৩ হাজার ৩০৭ জন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৯৭৫টি।
চারঘাটে নির্বাচনে দুপুর পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটেনি। তবে কয়েক জায়গায় কেন্দ্রের বাইরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী আছেন তিনজন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ছয়জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ছয়জন। চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফকরুল ইসলাম (আনারস), বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া বিপ্লব (ঘোড়া) ও চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুল হাসান মামুন (মোটরসাইকেল)।
এই উপজেলার ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৬৩টি। ভোটকক্ষের সংখা ৫০৭টি। ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার ৪০৩। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯০ হাজার ৫৮৩ ও নারী ভোটার ৮৯ হাজার ৮১৯ জন।