চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত আব্দুস সালাম (বাঁয়ে) ও আব্দুল মতিন |ছবি: সংগৃহীত |
প্রতিনিধি চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালামসহ দুজনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। নিহত ওই আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ মামলায় শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের রাণীহাটি ডিগ্রি কলেজের সামনে গুচ্ছগ্রামে একদল দুর্বৃত্ত জেলা পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সালাম ও হরিনগর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল মতিনকে গুলি করে হত্যা করে।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সালামসহ দুজনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে ৫২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ওই মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ মামলার প্রধান আসামি বিএনপি নেতা আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৮ থেকে ১০টি মামলা রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, গত মেয়াদ ছাড়া আশরাফুল ইসলাম নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের একাধিকবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। স্থানীয় সন্ত্রাসী দলের নেতা হলেও তাঁর উত্থান ঘটে শিবগঞ্জ আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহজাহান মিঞার পৃষ্ঠপোষকতায়। নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এর মধ্যে একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন আশরাফুল ইসলাম আর অন্য পক্ষের নেতৃত্বে এসেছেন বিভিন্ন জন।
সবশেষে আশরাফুল ইসলামদের বিপক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তাঁদের বিবাদ চলে আসছে। বিবদমান দুটি পক্ষের মধ্যে অনেকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় গত ২০–২৫ বছরে ১০ জনের বেশি নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হন। এর মধ্যে গত ১৪ মাসে বিএনপি নেতা ও ইউপি সদস্য মো. আলম ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সালামসহ নিহত হলেন চারজন। এই সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা আশরাফুল ইসলামের বড় ভাই মাহবুবুল ইসলাম ছিলেন এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী। ২০০৬ সালে কানসাট বিদ্যুৎ আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিলে কানসাটে বোমা হামলা চালাতে গিয়ে আন্দোলনকারীদের গণপিটুনিতে তিনি নিহত হন।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে রাণীহাটি ডিগ্রি কলেজের সামনে বন্ধুবান্ধব ও সহযোগীদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সালাম ও স্কুলশিক্ষক আবদুল মতিন। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাঁদের গুলি করে হত্যা করে। আবদুস সালাম ইউনিয়নের মোড়লপাড়া ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি বিএনপি নেতা মো. আলম হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। নিহত আবদুল মতিন একই উপজেলার ফতেপুর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। তিনি হরিনগর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।