কিশোর তপু হোসেন হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পাবনা জেলা পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি পাবনা: বাড়ির পাশে ছাত্রাবাসের তিন তরুণের সঙ্গে পরিচয় হয় কিশোর তপু হোসেনের (১৪)। পরিচয় থেকে হয় বন্ধুত্ব। এরপর তাঁদের সঙ্গে চলতে থাকে মুঠোফোনে গেম, আড্ডা ও ধূমপান। কিন্তু সেই তিন তরুণ ছিলেন মাদকাসক্ত। মাদকের টাকা ও হাতখরচ জোগাড় করতেই তাঁরা তপুকে অপহরণের নাটক সাজান। এরপর তাকে হত্যা করে মুক্তিপণের টাকা নেন। মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানায় পাবনা জেলা পুলিশ।

পাবনার ঈশ্বরদীতে নিখোঁজের আট দিন পর কিশোরের টুকরা করা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই তরুণের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা দেন পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী। গ্রেপ্তার দুজন হলেন পাবনা সদর উপজেলার দুবলিয়া এলাকার জয়নাল আবেদীন (২০) ও ঈশ্বরদীর মাশুড়িয়াপাড়ার ঈসা খালাশি (১৯)। এ ঘটনায় জড়িত সোহেল হোসেন নামের অপর একজন পলাতক।

তপু হোসেন | ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ জানায়, নিহত তপু হোসেনের বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলা সদরের মাশুড়িয়াপাড়া এলাকায়। ১৫ জুন সকাল পর্যন্ত তপু বাড়িতেই ছিল। বিকেল থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। রাতে তপুর মুঠোফোন থেকে তার বাবার কাছে ফোন দিয়ে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। তিনি মুক্তিপণ হিসেবে বিকাশে ১০ হাজার টাকা পাঠান। এর পর থেকেই সেই মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বিষয়টি থানায় জানানো হলে পুলিশ মুঠোফোন নম্বর শনাক্ত করে তপুর খোঁজ শুরু করে। একপর্যায়ে সন্দেহভাজন দুই তরুণকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাঁরা লাশের সন্ধান দেন। পরে পুলিশ তপুর বাড়ির পাশের একটি মেসে অভিযান চালিয়ে বাক্স থেকে তার টুকরা করা লাশ উদ্ধার করে।

ঈশ্বরদী থানা থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার দুজন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া দুজন ঈশ্বরদী কলেজের পেছনে অরণ্য ছাত্রাবাসে ভাড়া থাকতেন। নিহত তপুর বাড়ি ছাত্রাবাসের পাশেই। ফলে ছাত্রাবাসে থাকা তিন তরুণের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। তাঁরা একসঙ্গে মুঠোফোনে গেম খেলতেন, আড্ডা দিতেন ও ধূমপান করতেন। তিন তরুণের মধ্যে জয়নাল আবেদীন জেলা সদরের আতাইকুলা থানার একটি হত্যা মামলার আসামি। তিনি নেশাগ্রস্ত। তাঁর নেশার টাকা, মামলা চলানোর খরচ ও হাতখরচের টাকা ছিল না। তাই তিনি গ্রেপ্তার হওয়া ঈসা খালাশি ও পলাতক সোহেল হোসেনের সঙ্গে তপুকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। তিনজন মিলে কৌশলে তপুকে মেসের তিনতলায় নিয়ে যান। তপু তাঁদের পরিকল্পনা বুঝতে পেরে আতঙ্কে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে। এ সময় তাঁরা চাকু দিয়ে তপুকে হত্যা করেন। এরপর লাশ গুমের জন্য টুকরা করে ছাত্রাবাসের একটি টিনের বাক্সে লাশ লুকিয়ে রাখেন। একই সঙ্গে জয়নাল তপুর বাবার কাছে ফোন দিয়ে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।

আকবর আলী মুন্সী আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা নানা কৌশল অবলম্বন করতে থাকেন। পুলিশ বিষয়টি জানার পর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁদের সন্ধান পায়। পরে দুজনকে আটক করা হলে তাঁরাই তপুর লাশের সন্ধান দেন। নিহত তপুর বাবা আবুল কাশেম বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় আটক দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।অপরজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম, ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম, পরিদর্শক তদন্ত মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।