মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত কয়েদি, জঙ্গি মামলায় অভিযুক্তসহ গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের বগুড়া কারাগার থেকে সরিয়ে অন্য কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। আজ সকালে বগুড়া জেলা কারাগারের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি বগুড়া: কনডেমড সেলের ছাদ ফুটো করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালানোর ঘটনায় বগুড়া কারাগারের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়ায় মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত কয়েদি, জঙ্গি মামলায় অভিযুক্তসহ আসামিদের অন্য কারাগারে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েদিদের রাজশাহী বিভাগীয় কারাগারসহ পাশের বিভিন্ন কারাগারে সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এদিকে কারাগারের কনডেমড সেলের ছাদ ফুটো করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালানোর ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে তিন কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রধান কারারক্ষীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে। বগুড়া জেলা কারাগারের একটি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
কয়েদি সরিয়ে নেওয়া শুরু
গত মঙ্গলবার রাতে কনডেমড সেলের ছাদ ছিদ্র করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালানোর ঘটনায় বগুড়া জেলা কারাগারের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ১৯১ বছরের পুরোনো ইট-সুরকি দিয়ে নির্মিত কারাগার ভবনের সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও জঙ্গি মামলার আসামিদের রাখা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হয়ে উঠেছে। তাই কারা কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ মামলায় মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আসামিদের বগুড়া কারাগার থেকে পাশের কারাগারে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে।
আজ সকাল ১০টায় কারাগারের কনডেমড সেল থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন কয়েদিসহ গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ আসামিকে রাজশাহী বিভাগীয় কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সরিয়ে নেওয়া পাঁচ কয়েদি হলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নাঈম মন্ডল, শিবলু ফকির ও আবদুর রাজ্জাক; এ ছাড়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুই কয়েদি হলেন রবিউল ইসলাম ও আবদুর রহিম। এর মধ্যে নাঈম, রাজ্জাক ও শিবলু কারাগারের কনডেমড সেলে একসঙ্গে ছিলেন।
আজ সকাল ১০টায় বগুড়া জেলা কারাগারের ফটকে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যানে কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে পাঁচ কয়েদিকে রাজশাহী কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। প্রিজন ভ্যানের সামনে পুলিশের আলাদা একটি গাড়ি রয়েছে।
তিন কারারক্ষী সাময়িক বরখাস্ত
কনডেমড সেলের ছাদ ফুটো করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালানোর ঘটনায় বগুড়া কারাগারে প্রধান দুই কারারক্ষী দুলাল মিয়া (কারারক্ষী নম্বর ৩১৪১৭), আবদুল মতিন (কারারক্ষী নম্বর-৩১৪৯৯), ও আরিফুল ইসলামকে (কারারক্ষী নম্বর ৩২৩৫৬) দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া আরও তিন কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। বিভাগীয় মামলায় অভিযুক্ত তিন কারারক্ষী হলেন বগুড়া জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আমিনুল ইসলাম (কারারক্ষী নম্বর ৩১২০০), সহকারী প্রধান কারারক্ষী সাইদুর রহমান (কারারক্ষী নম্বর ৩১৬৩৬) ও কারারক্ষী রেজাউল করিম (কারারক্ষী নম্বর ৩১২৯৬৭)।
বগুড়া জেলা কারাগারের ছাদ ছিদ্র করে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালিয়ে যান। পরে স্থানীয় জনতা কারাগারের অদূরে একটি সেতুর নিচ থেকে চারজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। এদিকে চার কয়েদিকে গতকাল সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে আবার বগুড়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ফাঁসির দণ্ড পাওয়া ওই চার কয়েদি হলেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গা এলাকার নজরুল ইসলাম (কয়েদি নম্বর ৯৯৮), নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার ফজরকান্দি এলাকার আমির হোসেন (কয়েদি নম্বর ৫১০৫), বগুড়ার কাহালু পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মান্নানের ছেলে মো. জাকারিয়া (কয়েদি নম্বর ৩৬৮৫) ও বগুড়ার কুটুরবাড়ি পশ্চিম পাড়া এলাকার ফরিদ শেখ (কয়েদি নম্বর ৪২৫২)।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর ফাঁড়ির ইনচার্জ সুজন মিঞা বলেন, কনডেমড সেলের ছাদ ফুটো করে পালানোর পর গ্রেপ্তার চার কয়েদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হতে পারে।
এ ঘটনায় বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে গঠিত ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটিতে জেলা পুলিশ, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও জেলা কারা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।