শুধু এমপিকে মাননীয় বলতে হবে, অন্য কাউকে বললে অপরাধ হবে: সংসদ সদস্য ফারুক চৌধুরী

নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিনের কর্মী-সমর্থকদের দেখে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ চত্বরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছেন, ‘মেম্বার অব পার্লামেন্ট কিন্তু খুব ডেঞ্জারাস জিনিস। সামনে সোজা হয়ে কথা বলতে হবে। বাংলাদেশের যেকোনো মেম্বার অব পার্লামেন্টকে কথা বলতে হলে বলতে হবে মাননীয় সংসদ সদস্য। প্রাইম মিনিস্টারও (প্রধানমন্ত্রী) যদি একজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন, তিনি বলেন মাননীয় সংসদ সদস্য। রিমেম্বার ইট (এটা মনে রাখবেন)।’

গতকাল বৃহস্পতিবার গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় এই মন্তব্য করেছেন সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। সভায় তিনি আরও বলেন, ‘একমাত্র রাষ্ট্রপতিকে বলতে হবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি। অন্য কাউকে মহামান্য বললে সেটা অপরাধ হবে। একইভাবে মেম্বার অব পার্লামেন্টকে শুধু মাননীয় বলে সম্বোধন করতে হবে। অন্য কাউকে বলা যাবে না। বললে অপরাধ হবে। একমাত্র মাননীয় মেম্বার অব পার্লামেন্ট, একমাত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতি।’

তিনি উপজেলা পরিষদের সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘অফিসার (কর্মকর্তা) এবং জনপ্রতিনিধি হলেই হবে না, নিয়মগুলো জানতে হবে। আমরা ওভারলুক (উপেক্ষা) করি তার অর্থ এই না যে আমরা অপাত্রের জিনিস হয়ে গেছি।’

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দফায় গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ওমর ফারুক চৌধুরীর পছন্দের প্রার্থী বিদায়ী উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের ভরাডুবি হয়েছে। তিনি নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান গোদাগাড়ী উপজেলা যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক বেলাল উদ্দিন সোহেলের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন। বেলাল উদ্দিন এর আগে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন এবং উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার তিনি সংসদ সদস্যের নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিনের দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠান ও মাসিক সমন্বয় সভা।

সভায় ওমর ফারুক চৌধুরী আরও বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান ইজ নাথিং। একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের চেয়েও কাগজ-কলমে উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা কম।’  

সংসদ সদস্য আরও বলেন, ‘আমি বলব, আমার এই কথাগুলো রেজল্যুশনে আসুক। পরিষদ যেন এই কথাগুলো টু দ্য পয়েন্টে মেনে চলে। আমি ধরি নাই। তার অর্থ এই নয় যে আমি ধরব না। আমি বলি নাই তার অর্থ এই নয় যে আমি বলব না, আমি বলতেই পারি।’ পুরো আইন পড়ে আসার কথা উল্লেখ করে সংসদ সদস্য আরও বলেন, ‘মানুষ যদি সরকারের সাথে কোনো বিষয়ে যোগাযোগ করতে চায়, ওই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্যকে অবগত করতে হবে। সুতরাং যারাই কোনো কপি সরকারকে দিতে চায়, সেটি আমাকে দিতে হবে। আরও অনেক আইন আছে। আমি এত দিন পড়ি নাই। আইনগুলো সবাইকে পড়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ রাখলাম। এই আইনে যা আছে তাই অ্যাক্ট করার জন্য বললাম, এর পর থেকে কিন্তু আমি ধরে বসব এবং শক্তভাবে ধরে বসব। কারণ কেউ যদি ভালোবাসার মূল্য দিতে না জানে, সে মূল্য আদায় করে নিতে হবে।’

‘উপজেলা চেয়ারম্যান ইজ নাথিং’ এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্সিং (বিতরণ) ক্ষমতা নেই। যেটা একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের আছে। উপজেলা চেয়ারম্যান হয়তো সুপারভাইস করতে পারেন। তাই তিনি বলেছেন।

সংসদ সদস্যকে সম্বোধনের বিষয়টি সভায় বলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একজন নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন শপথ নেওয়ার সময় বিভাগীয় কমিশনারকে মহামান্য বলে সম্বোধন করেছেন। সেই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েই তিনি বলেছেন যে কাকে মাননীয় বলতে হবে আর কাকে মহামান্য বলতে হবে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন বলেন, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি কোনো বক্তব্যই দেননি। সুতরাং মাননীয় বা মহামান্য এটা বলার প্রশ্নই ওঠে না।