রাজশাহীতে শিশুশিক্ষার্থীকে পিটুনির অভিযোগে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

প্রচণ্ড মারে শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রের সারা শরীরে কালশিটে দাগ পড়েছে | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহীর শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিশুশিক্ষার্থীকে (১২) বেধড়ক পিটুনির অভিযোগে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহীর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে মামলাটি করেছেন ওই শিক্ষার্থীর বাবা। আদালতের বিচারক শংকর কুমার বিশ্বাস মামলা আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. ইমতিয়ার মাসরুর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. গোলাম মাওলাকে। তাঁর বিরুদ্ধে বিনা দোষে ওই ছাত্রকে অমানবিকভাবে পিটিয়ে অসুস্থ করে ফেলার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি রাজশাহী পুলিশ লাইনসের ভেতরে অবস্থিত। ৮ জুন ওই বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। পরদিন রোববার ভুক্তভোগী ছাত্রের বাবা বিদ্যালয়ের সভাপতি ও পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। বিষয়টি পুলিশও তদন্ত করছে।

আদালতে করা মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেছেন, শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. গোলাম মাওলা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের নির্যাতন করে আসছেন। গত শনিবার বিদ্যালয় চলাকালে টিফিন পিরিয়ডে তাঁর ছেলে নিজের ও তার দুই সহপাঠীর নামের প্রথম অক্ষর যোগ চিহ্ন দিয়ে নিজ খাতায় লেখে। এ সময় অধ্যক্ষ বেত হাতে টহলরত অবস্থায় বিষয়টি লক্ষ করে তাঁর ছেলেকে বলেন, ‘কোন মেয়ের নাম তোর খাতায় লিখছিস?’ তখন তাঁর ছেলে বলে, তার নাম ও তার দুই বন্ধুর নাম যোগ চিহ্ন দিয়ে খাতায় লিখেছে। তখন অধ্যক্ষ কোনো যাচাই না করেই বেত দিয়ে বাঁ হাতে, পিঠে, বাঁ পায়ের হাঁটুর ওপর এবং মাথার সামনে কপালের ওপর নির্মমভাবে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এ সময় ওই ছাত্র অধ্যক্ষের কাছে তার অপরাধটা কী জানতে চায়। কিন্তু অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমাকে তোর কাছে কোনো জবাবদিহি করতে হবে না।’ এ কথা বলে আবারও তাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। ওই ছাত্র তখন পা ধরে মাফ চেয়ে বলে, ‘স্যার, আমি তিন দিন ধরে জ্বর ছিল। আমি আর সহ্য করতে পারছি না, আমি কোনো দোষ করিনি।’ এ কথা শুনে অধ্যক্ষ বলেন, ‘তুই তোর দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোকে ছেড়ে দেব।’ এ অবস্থায় তার ছেলে বেঞ্চের নিচে পড়ে গেলে অধ্যক্ষ তাকে সেখান থেকে বের করে নির্মমভাবে মারতে মারতে বলতে থাকেন, ‘এই ঘটনা বাইরের কাউকে বলবি না, বললে তোকে পিটিয়ে মেরে শেষ করে ফেলব।’

মামলার আরজিতে বাদী আরও বলেন, তাঁর ছেলে এই অবস্থায় সেই দিন বাকি ক্লাস করে দুপুরে স্কুল ছুটি হলে স্কুলের বাসে করে বাসায় ফেরে। ছেলে বাসায় ফেরার পর তাকে খেতে দিলে না খেয়ে বলে, তার খেতে ভালো লাগছে না। তাঁর স্ত্রী রাতে শোয়ার সময় তাকে বিছানায় না শুয়ে বসে থাকতে দেখে। তার এ রকম অস্বাভাবিক আচরণের কারণ জিজ্ঞেস করলেও কোনো জবাব দেয় না। এ অবস্থায় তাঁর স্ত্রী ছেলের বাঁ হাতে একটি আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। পরে তার পরনের গেঞ্জি খুলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের অনেক চিহ্ন দেখতে পান। পরে রাতে তাঁদের পুরো ঘটনা খুলে বলে ছেলে। ছেলের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে সেদিন রাত ১২টার দিকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান তাঁরা। চিকিৎসক ওষুধ লিখে দিয়ে শিশুটিকে বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেন। এ ঘটনায় সেদিন রাতে রাজপাড়া থানায় মামলা করতে গেলে রাত ২টা পর্যন্ত বসিয়ে রেখে মামলা নেওয়া হয়নি।

ওই ছাত্রের বাবা বলেন, তিনি ন্যায়বিচারের জন্য আদালতে মামলা করেছেন। আশা করছেন ন্যায়বিচার পাবেন। তিনি আরও বলেন, তাঁর ছেলে এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তার শরীরে আঘাতের ব্যথা আছে এখনো। তিনি ছেলের চিকিৎসা করাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন ধরেননি অধ্যক্ষ গোলাম মাওলা।