বগুড়া জেলার মানচিত্র

প্রতিনিধি শেরপুর: বগুড়ার শেরপুরে অর্থের বিনিময়ে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ হচ্ছে, এমন অভিযোগ উঠলে আর পরীক্ষা হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হননি নিয়োগ কমিটির পাঁচ সদস্য। ওই সময়ে বিদ্যালয়ের সামনে উপস্থিত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ছোনকা দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে।

গতকাল শুক্রবার বিকেল চারটা থেকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ চারটি পদে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের কথা ছিল। নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা গতকাল বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত বিদ্যালয় চত্বর ও সামনের সড়কে অবস্থান নেন। এখানে ছিলেন বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছাড়া অন্য সদস্যরা। তাঁরা বলেন, নিয়োগ নিয়ে ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠার কারণেই এ নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরাও উপস্থিত হননি।

গতকাল বিকেলে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী—এ চার পদের বিপরীতে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন ৩৬ প্রার্থী। তবে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছা. খুরশিদী খুদা ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফেরদৌস জামান উপস্থিত ছিলেন না। ওই দুজন ছাড়া এই নিয়োগ কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন অর রশিদ, শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও বগুড়া জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি শেরপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম রেজাউল করিম আছেন। গতকাল সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এই পাঁচ প্রতিনিধির কেউ বিদ্যালয় চত্বরে উপস্থিত হননি।

অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফেরদৌস জামান অন্তত অর্ধকোটি টাকার নিয়োগ–বাণিজ্য করেছেন। কমিটির অভিভাবক সদস্য আবদুল হামিদ বলেন, তাঁরাও জেনেছেন যে বিদ্যালয়ের সভাপতি এই নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্য করেছেন। এতে তাঁরাসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন জিহাদীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ দেন চন্দিপুর গ্রামের বাসিন্দা ফয়সাল আবির। তিনি বলেন, কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দিতে তাঁর কাছ থেকে ১৪ লাখ ২০ টাকা নিয়েছেন ফেরদৌস জামান। বেশি অর্থ পাওয়ায় পদটিতে এখন আরেক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে চাচ্ছেন ফেরদৌস। এই টাকা নেওয়ার সব তথ্যপ্রমাণ তাঁর কাছে আছে।

অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে ইউএনও সুমন জিহাদী বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে নিয়োগ পরীক্ষায় অনুপস্থিতির কারণ নিয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফেরদৌস জামান বলেন, এই নিয়োগ নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সত্য নয়। তিনি ফয়সাল আবিরের কাছে ব্যবসায়িক কারণে টাকা ধার নিয়েছেন। তাঁর দাবি, এই নিয়োগ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত না হওয়ায় গতকাল পরীক্ষাটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। পরে দিন, তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্টদের জানানো হবে।