‘বড় গরু যে কেউ কিনবে না, ভাবতে পারি নাই’

রাজশাহীর পুঠিয়ার খামারি ইদ্রিস আলীর অবিক্রীত গরু | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ড্রিঞ্জা চাম্বুগং: ‘এই হাটে (উত্তরা দিয়াবাড়ি) যেদিন আসি, সেদিনই একটি সুপারশপ থেকে আমার তিনটি গরুর দাম ১৩ লাখ টাকা বলেছিল। কিন্তু সেদিন বিক্রি করি নাই। আশা ছিল, আরও দাম পাব। কিন্তু বড় গরু যে কেউ কিনবে না, ভাবতে পারি নাই। গরুগুলো বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।’

কথাগুলো রাজশাহীর পুঠিয়ার খামারি ইদ্রিস আলীর। এলাকায় তাঁর ‘গ্রিন এগ্রো’ নামে ডেইরি ফার্ম (দুগ্ধ খামার) আছে। এই খামারেই গাভি থেকে যে এঁড়ে বাছুর হয়, সেগুলো তিনি কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য পালেন।

আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি হাটে কথা হয় ইদ্রিসের সঙ্গে। সে সময় পর্যন্ত ইদ্রিসের এই হাটে আনা বড় আকারের দুটি গরু অবিক্রীত ছিল। তবে আগে তিনি একটি বড় গরু বিক্রি করতে পেরেছিলেন।

আজ উত্তরার এই হাটের বেশির ভাগ জায়গা ফাঁকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাটে থাকা বেশির ভাগ গরুর গত রাতেই বিক্রি হয়ে গেছে। এখন শুধু আকারে বড়, এমন গরু অবিক্রীত আছে। এ ছাড়া কিছু গরু আজ সকালে হাটে এসেছে।

অবিক্রীত দুটি বড় গরু প্রসঙ্গে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘গতকাল রাতে এক ক্রেতা একটি গরুর দাম ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বলেছিলেন। কিন্তু আজকে এখন পর্যন্ত কেউ দামই বলেননি। শেষ পর্যন্ত বড় গরু দুটি বেচতে পারব কি না, জানি না।’

প্রতিটি গরু সাড়ে চার লাখ টাকা করে বিক্রির ইচ্ছা আছে বলে জানান ইদ্রিস। তিনি বলেন, তাঁর গরু দুটির একেকটির ওজন প্রায় ১৮ থেকে ২০ মণের মতো হবে।

ইদ্রিসের মতো যেসব খামারি বা পাইকার আকারে বড় গরু নিয়ে হাটে এসেছেন, তাঁদের বেশির ভাগের গরু এখনো বিক্রি হয়নি। অথচ হাট প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে।

হাটে যাওয়া ক্রেতারা এক লাখ টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকা দামের মধ্যে বেশি গরু কিনছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। প্রতি মণ গরু ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাবনার খামারি ফরহাদ হোসেনের অবিক্রীত গরু | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

চুয়াডাঙ্গার পাইকার আলী আকবর। তিনি গত বৃহস্পতিবার উত্তরা দিয়াবাড়ি হাটে ৭টি গরু নিয়ে আসেন। গতকাল রাতের মধ্যে তাঁর ৫টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে।

যে দুটি গরু অবিক্রীত আছে, আকবরের হিসাবে সে দুটির ওজন কম করে হলেও ২০ মণ করে ৪০ মণ হবে। তিনি দুটি গরুর জন্য দাম চাইছেন ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা।

আকবর বলেন, তাঁর যে পাঁচটি গরু বিক্রি হয়েছে, সেগুলোর দাম পড়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। গরুগুলো ছোট ও মাঝারি আকারের ছিল।

অবিক্রীত দুটি গরুর বিষয়ে আকবর বলেন, ‘গতকাল রাতে এক ক্রেতা দুইটা গরুর জন্য মোট ৮ লাখ টাকা দাম বলেছিল। কিন্তু এই দামে বেচলে অনেক টাকা লোকসান হবে। তাই বেচিনি। আজকে কেউ দামই বলছে না।’

পাবনার খামারি ফরহাদ হোসেনের একটি বড় গরু অবিক্রীত রয়ে গেছে। প্রায় ১৮ মণ ওজনের গরুটির জন্য তিনি দাম চাইছেন ৬ লাখ টাকা। কিন্তু দাম বলা হচ্ছে অর্ধেকের একটু বেশি, ৩ লাখ ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।

ফরহাদ বলেন, হাটে এবার ছোট গরু বেশি চলছে। বড় গরু কেউ ধরছে না। আগে জানলে বড় গরু এত দূর থেকে কষ্ট করে হাটে আনতেন না। খামার থেকেই বিক্রি করে দিতেন।

উত্তরা দিয়াবাড়ি হাটে হাসিল আদায়ে যুক্ত ইমরান হোসেন বলেন, হাটে ক্রেতারা এবার ছোট আকারে গরু বেশি কিনছেন। খাসিও বিক্রি হচ্ছে অনেক।

ইমরান আরও বলেন, গত রাতে প্রচুর ক্রেতা ছিল। বেচাবিক্রিও অনেক হয়েছে। ভোরের দিকেই হাট প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়।

আজ সকালে উত্তরা দিয়াবাড়ি হাটে গিয়ে গরুর রাখার নির্ধারিত জায়গাগুলো ফাঁকা দেখা যায়। রাস্তার পাশে শুধু সামনের দিকে কিছু গরু ছিল। হাটে ক্রেতার ভিড়ও বেশি ছিল না।

বিক্রেতারা বলছেন, বেশির ভাগ ক্রেতা গত শুক্রবার হাটে এসে দরদাম যাচাই করেছেন। আর গতকাল শনিবার কোরবানির পশু তাঁরা কিনে ফেলেছেন। বিকেলে ক্রেতার চাপ হয়তো আরও কমে যেতে পারে।