রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কৃষক হেফজুল হক। রোববার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি রাজশাহী: কৃষক হেফজুল হকের গালে গত ৩১ মে কামড় দিয়েছিল রাসেলস ভাইপার সাপ। তিনি সাপটিকে মেরে ব্যাগে ভরে মোটরসাইকেলের পেছনে বসে হাসপাতালে এসেছিলেন। তিন দিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। আজ রোববার সকালে তিনি সপরিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন।
হেফজুল হকের বাড়ি চারঘাট উপজেলার পিরোজপুর গ্রামে। তিনি জানান, সকালে ফজরের নামাজ পড়ে তিনি ধান কাটতে গিয়েছিলেন। ধান কাটা শেষের দিকে ধানখেতে একটি সাপ দেখা যায়। তিনি ধান কাটা কাঁচি দিয়ে সাপটির শরীরের মাঝবরাবর চেপে ধরেন। মাথা ঝুঁকে সাপটিকে কাঁচি দিয়ে চেপে ধরার সময় সাপ তাঁর গালে ছোবল মারে। তারপর সবাই মিলে সাপটিকে মেরে বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাড়িতে এসে ভাগ্নের মোটরসাইকেলের পেছনে বসে চারঘাট থেকে সোয়া ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। আইসিইউতে ভর্তি হন। চিকিৎসক তাঁকে অ্যান্টিভেনম দেন।
তিন দিন চিকিৎসার পর হেফজুলকে চিকিৎসক জানান, হেফজুল হকের শরীরের বিষের আর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তারপর তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়। এত দিন তিনি বাড়িতে বিশ্রামে ছিলেন। এখন শুধু গালের যেখানে সাপ কামড় দিয়েছিল, সেখানে একটু ব্যথা অনুভব করেন। আর কোনো সমস্যা নেই। তিনি এই চিকিৎসকের কাছে কৃতজ্ঞ। তাই দুই সন্তান ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন।
হেফজুল হকের স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, ঘটনার দিন তিনি বাসায় বসে ধান ঝাড়ছিলেন। হঠাৎ তাঁর স্বামীর বোন কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এসে বলেন, তাঁর ভাই সাপের কামড়ে মারা গেল। কিছুক্ষণ পর দেখেন, তাঁর স্বামী সাপ মেরে হাতে করে নিয়ে আসছেন। তাঁর পেছনে অনেক মানুষ। স্বামী তাঁর সঙ্গে কোনো কথা বললেন না। দেরি না করে ভাগ্নের মোটরসাইকেলের পেছনে উঠেই হাসপাতালে চলে গেলেন। যাওয়ার সময় সাপটা ব্যাগে ভরে নিয়ে যান। চিকিৎসক দুইবার রক্ত পরীক্ষা করেন। ওষুধ দেন। আইসিইউ ইউনিটের চিকিৎসকেরা এত আন্তরিকতা দেখান যে তাঁরা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছেন না। তিন দিনের মাথায় তাঁর স্বামী সুস্থ হয়ে ওঠেন। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি ভালোই আছেন। তবে এখনো কাজে যেতে দেননি। চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে তিনি যদি বলেন যে আর কোনো সমস্যা নেই, তাহলে কাজে যাবেন।
তানিয়া আক্তার বলেন, তাঁরা নিজেরা দেখছেন যে তাঁর স্বামীর শরীরে সাপের বিষের আর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবু ফেসবুক দেখে শুধু ভয় লাগে। অনেক দিন পরও নাকি রাসেলস ভাইপার সাপে কাটা মানুষ মারা যায়। তাই আবারও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে এসেছেন।
আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল তাঁদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, হেফজুল হকের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, তিনি সময়মতো এসেছেন। অ্যান্টিভেনম ছিল। তাঁরা দিয়েছেন। আর পরীক্ষা করে দেখেছেন, তাঁর রক্ত জমাট বাঁধছে কি না। কিন্তু না, তিনি স্বাভাবিক ছিলেন। তবে দেরি হলে কিডনির ক্ষতি হয়ে যায়। তখন ডায়ালাইসিস করতে হয়। চিকিৎসায় অনেক দিন সময় লাগে। তারপরও অনিশ্চয়তা থাকে। কিন্তু কামড় দেওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে রোগী হাসপাতালে পৌঁছাতে পারলে তার আর কোনো সমস্যা হবে না।
আবু হেনা মোস্তফা কামাল আরও বলেন, তিনি ২০১১ সাল থেকে এই সাপে কামড় দেওয়া
রোগীর চিকিৎসা করছেন। ওঝা বা কবিরাজের কাছে না গিয়ে সময়মতো হাসপাতালে এলে
সেই রোগীর পরে আর কোনো সমস্যা হয় না। হেফজুলেরও আর কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি বলেন, ফেসবুকে অনেক সময় গুজব ছড়ানো হয়। কারণ, রাসেলস ভাইপার অলস
প্রকৃতির সাপ। মানুষকে তেড়ে গিয়ে কামড় দেয় না। শুধু আঘাত পেলেই কামড় দেয়।
আর সময়মতো এসে চিকিৎসা নিলে পরে আর কোনো সমস্যা হয় না। হেফজুল এখন সব ধরনের
কাজ করতে পারবেন। গালে যে ব্যথা অনুভব করছেন, সেটাও ঠিক হয়ে যাবে।