জয়পুরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবন। সম্প্রতি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি জয়পুরহাট: ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১১টা বেজে ৪২ মিনিট। বিচারক এসে এজলাসে বসলেন। বেঞ্চ সহকারী একের পর এক বিভিন্ন মামলার নথি একে বিচারকের কাছে উপস্থাপন করেন। মামলার বাদী-বিবাদীরা কাঠগড়ায় উঠে নিজেরাই বিচারকের কাছে তাঁদের বক্তব্য পেশ করছিলেন। বিচারক উভয় পক্ষের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে আদেশ দেন। আদালতে অন্য সবাই উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না শুধু আইনজীবীরা।
আজ বৃহস্পতিবার জয়পুরহাটের জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মো. নূর ইসলামের আদালতে এমন চিত্র দেখা গেল। গত সোমবার থেকে আইনজীবীরা এই বিচারকের আদালত বর্জন করেছেন। তবে আইনজীবীরা না এলেও আদালতের দৈনন্দিন কার্যক্রম থেমে নেই। বাদী-বিবাদীরা নিজেরা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজেদের শুনানি করছেন। চার দিন ধরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ অবস্থা চলছে।
একটি মামলার কাজে আজ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এসেছিলেন সদর উপজেলার পলি কাদোয়া গ্রামের ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম আইনজীবী না থাকাই আদালতে ভোগান্তি হবে। কিন্তু উল্টো চিত্র দেখলাম।’
জয়পুরহাট আইনজীবী সমিতি সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য জ্যেষ্ঠ জেলা দায়রা জজ মো. নূর ইসলামের আদালত বর্জন শুরু করে। এর আগে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহনুর রহমান নোটিশের মাধ্যমে আদালত বর্জনের কথা জানান।
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ৩ জুন আইনজীবী সমিতির সদস্য গোলাম মোর্শেদ আল কোরেশী ও তাঁর সহকারী প্রিতমের বিরুদ্ধে জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করা হয়। যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বেঞ্চ সহকারী নাঈম হোসাইন মামলাটি করেন। মামলায় আদালত থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। এ ঘটনায় সমিতির সদস্য ও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেলা ও দায়রা জজ মো. নূর ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার নিষ্পত্তি নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু সন্তোষজনক সমাধান হয়নি।
এরপর ৬ জুন জরুরি সভা ডেকে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার মূল বিষয় ছিল আইনজীবী গোলাম মোর্শেদ ও তাঁর সহকারীর বিরুদ্ধে করা মামলা নিয়ে। সাত দিনের মধ্যে মামলা প্রত্যাহার ও বেঞ্চ সহকারীকে বদলি করা নিয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। সাত দিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে জেলা ও দায়রা জজ আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর আইনজীবীরা ২৪ জুন থেকে ওই আদালত বর্জন করছেন।
আইনজীবী গোলাম মোর্শেদ আল কোরেশী বলেন, ঘটনার পর আইনজীবী সমিতিতে অভিযোগ করার মাধ্যমে তিনি অপরাধী হলে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু তা না করে মামলা করা হয়েছে। তিনি কোনো ধরনের মারধর করেননি। একজনকে ছোট করায় প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছি। এ ঘটনায় আইনজীবী সমিতি আদালত বর্জন করেছে। বর্জনের তিন দিন হলেও কোনো সমাধান হয়নি।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহনূর রহমান বলেন, আইনজীবী ও তাঁর সহকারীর বিরুদ্ধে অসত্য মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়নি। মিথ্যা মামলার বাদী বেঞ্চ সহকারী নাঈম হোসাইনকে বদলিও করা হয়নি। তাঁদের বেঁধে দেওয়া সময়ে বিষয়টির না করায় সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তাঁরা জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ আদালত বর্জন করেছেন।
জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী এস এম শাহীন বলেন, আইনজীবীরা আদালতে আসছেন না। তবে স্বাভাবিকভাবেই আদালতের কার্যক্রম চলছে। আজ যথারীতি আদালত বসেছিল। আজ তিনটি মামলার রায়, দুটি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ, তিনটি মামলার অভিযোগ গঠন ও জামিন শুনানি হয়েছে। বাদী-বিবাদী নিজেরাই শুনানি করেছেন।