১০ ফুট দৈর্ঘ্য আর ৫ ফুট উচ্চতার ‘বাদশা’র ওজন ২৫ থেকে ২৬ মণ। এবারের ঈদে এটি বিক্রির উপযোগী হয়েছে বলে জানান খামারি। গতকাল তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি গোয়ালন্দ: রাজবাড়ী শহরের পশ্চিম ভবানীপুর মহল্লার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তিন বছর ধরে বাড়িতে পুষছেন ফিজিয়ান জাতের দুটি ষাঁড়। আদর করে বড়টির নাম রেখেছেন ‘রাজবাড়ীর বাদশা’ আর ছোটটির নাম ‘রাজবাড়ীর রাজা’। এবারের কোরবানি ঈদ সামনে রেখে বাদশার দাম হাঁকছেন সাড়ে ৯ লাখ এবং রাজার দাম ৭ লাখ টাকা।
হাবিবুর রহমান বলেন, প্রায় তিন বছর আগে মেয়ের জামাইয়ের বাড়ি থেকে ফিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় বাছুর কেনেন ৭০ হাজার টাকায়। সেখান থেকে ৬ মাস পর একই জাতের আরেকটি বাছুর কেনেন ৯০ হাজার টাকায়। প্রথমে কিনে আনা বাছুরটিই বাদশা, অন্যটি রাজা।
হাবিবুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের একটি ছাপরায় গরু দুটি শিকলে বাঁধা। এদের দেখভাল করছেন তাঁর স্ত্রী তাছলিমা বেগম।
এবার হাবিবুরের সঙ্গে কথায় যোগ দেন তাছলিমা বেগম। এই দম্পতি বলেন, তিন বছরে গরু দুটির পেছনে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় হয়েছে, তার সঠিক হিসাব নেই। তবে প্রতি সপ্তাহে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। কোরবানির উপযোগী হওয়ায় স্থানীয় কসাই এনে গরু দুটির মাংস কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কে ধারণাও নিয়েছেন তাঁরা।
তাছলিমা ও হাবিবুরের দাবি, ১০ ফুট দৈর্ঘ্য আর ৫ ফুট উচ্চতার বাদশার ওজন ২৫ থেকে ২৬ মণ। অন্যদিকে রাজার ওজন ১৫ থেকে ১৬ মণ। বাদশার দাম ৯ থেকে সাড়ে ৯ লাখ এবং রাজার দাম ৭ লাখ টাকা হাঁকা হলেও বিক্রির সময় কিছুটা কমবেশি হতে পারে বলে জানান তাঁরা।
গরু দুটিকে প্রতিদিন নিয়মমাফিক তিন–চারবার প্রাকৃতিক ঘাস, খৈল, কুড়া, ভুসি ও গমের ছাল খাওয়ানো হয় বলে জানান তাছলিমা। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত বাদশা কোনো দিন অসুস্থ হয়নি। তাই কোনো ধরনের ইনজেকশন কিংবা মোটাতাজাকরণের ওষুধ এটিকে খাওয়ানো হয়নি।
তাছলিমা বলেন, ‘নিজের সন্তানদের মতো বাদশা ও রাজাকেও অনেক যত্ন করে বড় করেছি। বাড়তি মায়া তৈরি হওয়ায় যাতে ওদের কোনো কষ্ট না হয়, সে চেষ্টা করি। গরমে কোনো সমস্যা যাতে না হয়, এ জন্য সব সময় বড় দুটি ফ্যান চালানো হয়। এখন আর ওদের খরচ চালাতে পারছি না। উপযুক্ত দাম পেলে এই কোরবানিতে বিক্রি করে দেব।’ একই কথা হাবিবুর রহমানেও। তিনি বলেন, ‘এত বড় গরু পালা অনেকটা ঝুঁকির। এখন ভালো ক্রেতা পেলে উপযুক্ত দামে বাড়ি থেকেই বাদশাকে বিক্রি করে দেব।’
রাজবাড়ীতে কোরবানি উপযোগী প্রায় ৬৬ হাজার গরু ও ছাগল প্রস্তুত রয়েছে বলে
জানান জেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম
তালুকদার। তিনি বলেন, অধিকাংশ খামার ও পারিবারিক খামারে দেশীয়
দানাদার–জাতীয় খাবার দিয়ে পশু প্রস্তুত করেছে। এ ধরনের বড় গরু রাজধানী বা
অন্যত্র নিয়ে বিক্রি করা অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই উপযুক্ত দামে পারিবারিক
খামার থেকেই এসব গরু কিনতে পারেন সবাই।