কোলাজ: পদ্মা ট্রিবিউন

এমরান হোসাইন শেখ: পঁচাত্তর বছরের আওয়ামী লীগ ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে ২৬ বছরের মতো। এর মধ্যে পাকিস্তান আমলে যুক্তফ্রন্টের শরিক হিসেবে দুই বছরের মতো প্রাদেশিক পরিষদে ক্ষমতায় ছিল। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলটি দেশের ২৪ বছর ক্ষমতায় রয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন এ দলটি টানা চতুর্থবার দেশ শাসনের ভার পেয়েছে। দলটি তার প্রতিষ্ঠার দুই-তৃতীংশ সময়ই ক্ষমতার বাইরে ছিল। এর মধ্যে ২২ বছরই পাকিস্তানের তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। অপরদিকে স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর টানা ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকতে হয়েছে। এ সময় দলটিকে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ২৬ বছরের মধ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার মেয়াদে ২০ বছর সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করে পঞ্চম মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন। গত ১১ জানুয়ারি নতুন করে প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেওয়া শেখ হাসিনা টানা চার মেয়াদে সাড়ে ১৫ বছর দেশ পরিচালনা করছেন। এর আগে তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭০ সালের নির্বাচনি ম্যান্ডেটে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশ শাসনের দায়িত্ব পায়। এরপর ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে দলটি নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনা করে। পঁচাত্তরের কালরাতে একদল দুষ্কৃতিকারীর হাতে সপরিবারে নিহত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষমতার বাইরে চলে যায় আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুবিহীন দলটি ব্র্যাকেট-বন্দি হয়ে পড়ে। ওই সময় প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে নেওয়ার মতো সাহস খুব কম মানুষেরই ছিল বলে জানা যায়। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বকারী দলটি। এরপর দীর্ঘ সংগ্রাম করে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২১ বছর পর ক্ষমতাসীন হয়। মাঝখানে বিএনপির ৫ বছর ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের শাসনকালের পর ২০০৯ সালে আবারও ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর অদ্যাবধি টানা ক্ষমতায় রয়েছে দলটি।

প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনবার বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকা পালন করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৮৬ সালে দুই বছর এবং ১৯৯১ সাল থেকে পাঁচ বছর এবং ২০০১ সাল থেকে পাঁচ বছরসহ মোট ১২ বছর সংসদে বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

৭৫ বছরের ৪৩ বছরই দলের দায়িত্বে শেখ হাসিনা
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত এ দলটির ৭৫ বছরের ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রী ও দলটির বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা এককভাবে ৪৩ বছর ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা তার বয়সের হিসাবেও ‍অর্ধেকের বেশি সময় ধরে দলটির নেতৃত্বে আছেন। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া শেখ হাসিনার বয়স এখন ৭৭ বছর চলছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ক্রান্তিকালীন সময়ে বিদেশে থাকাকালে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে শেখ হাসিনা দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই বছরের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের দায়িত্ব নেন। এরপর থেকে বর্তমান পর্যন্ত আওয়ামী লীগের টানা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নেতৃত্বে বেশ আগেই তিনি ছাড়িয়ে গেছেন পিতা মুজিবকে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠাকালে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৫৩ সালে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে টানা ১৩ বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করে ১৯৬৬ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই হিসাবে তিনি ২৫ বছর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু চার মেয়াদে ৯ বছর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করলেও শেখ হাসিনা ১০ মেয়াদে টানা ৪৩ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অসংগঠিত ও ব্র্যাকেটবন্দি দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করেছেন। তার নেতৃত্বে দল অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী।