বজ্রপাত নিরোধক দণ্ডটি শুধু আছে। এর সঙ্গে অন্যান্য যন্ত্রাংশ ও তার খোয়া গেছে। ৮ জুন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ড ভবনের ছাদে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ছয়টি বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হয়েছিল। এসব দণ্ড স্থাপনের পর অনেক যন্ত্রাংশ চুরি ও খোয়া গেছে। এর ফলে এসব স্থাপনে সরকারের অর্থই শুধু খরচ হয়েছে, বাস্তবে কোনো কাজে আসেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

রাজশাহীর গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছয়টি ভবনের ছাদে ছয়টি বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপনের জন্য ২০২২ সালের ১৭ মে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজটি পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাবর অ্যাসোসিয়েটস। কাজের চুক্তি মূল্য ছিল ৩৫ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৪ টাকা, মেয়াদ ছিল ২১ দিন। চুক্তি অনুযায়ী, হাসপাতালের প্রধান ভান্ডার (স্টোর) ভবন, হাসপাতালের ২৫, ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড ভবনের ছাদে একটি করে এবং প্রশাসনিক ভবনের ছাদে দুটি বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হয়। এসব দণ্ডের সঙ্গে মূল্যবান তার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংযুক্তও করা হয়েছিল। একই বছরের জুন মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শেষে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কাজ বুঝিয়ে দেয়। এরপর কত দিন এসব দণ্ড কার্যকর ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

পরে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ যোগ দেন। এই ছয় মাসের ব্যবধানে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ডগুলোর যন্ত্রাংশ চুরি ও খোয়া গেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, তিনি আসার পরে এসব দেখতে পাননি। হাসপাতালে চোরের উপদ্রব রয়েছে। কিছুদিন আগে আনসার সদস্যরা আটজন নারী পকেটমারকে আটক করেছেন। পকেটমাররা ফরিদপুর থেকে রাজশাহীতে এসেছিলেন। তাঁদের থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

৮ জুন হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ড ভবনের ছাদে গিয়ে দেখা যায়, বজ্রপাত নিরোধক দণ্ডটি আকাশের দিকে তাক করানো। দণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা পাইপের ভেতরে মূল্যবান তার নেই। অন্যান্য যন্ত্রাংশও খোয়ার যাওয়ার চিত্র চোখে পড়ে।

বজ্রপাত নিরোধক দণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত পাইপের ভেতরের তার খোয়া গেছে। ৮ জুন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ড ভবনের ছাদে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

হাসপাতালের প্রধান ভান্ডার ভবন এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ড ভবনের ছাদে গিয়েও শুধু বজ্রপাত নিরোধক দণ্ডটি চোখে পড়ে। দণ্ডের সঙ্গে অন্যান্য যন্ত্রাংশ ও প্রয়োজনীয় তার দেখা যায়নি। তবে একটি সূত্রের দাবি, কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ না করেই বিলের অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। যন্ত্রাংশ চুরিও গেছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাবর অ্যাসোসিয়েটসের হয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন রনী নামের স্থানীয় এক ঠিকাদার। গতকাল বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে রনী কাজটি করার কথা স্বীকার করেন। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বক্তব্যের জন্য তিনি সাক্ষাতে কথা বলার অনুরোধ জানান।

হাসপাতালের পাশে অবস্থিত গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয় এসব কাজ দেখভাল করেছে। কার্যালয়টির উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আয়াতুল্লাহ বলেন, সবকিছুই ঠিকমতো করা হয়েছিল। হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক কাজ বুঝে নেওয়ার সময়ের ছবিও রয়েছে। ঠিকাদার যথারীতি কাজটি হস্তান্তর করেছিলেন। তার পরেই মূল্যবান কপার তার চুরি হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে তো তাঁদের কিছু করার নেই।
গণপূর্ত বিভাগের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মচারী বলেন, হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য কর্তৃপক্ষ এত এত আনসার সদস্য নিয়োগ করেছে। অথচ এই মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়ে যায়, তারা কিছুই দেখে না।