৮ জুন তিন সহযোগীসহ আসিফকে (কালো পাঞ্জাবি গায়ে) ছিনতাইয়ের মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি চট্টগ্রাম: দিনে তাঁর চার থেকে পাঁচটি ইয়াবা সেবন করতে হয়। এর পেছনে খরচ হাজারখানেক টাকা। পুলিশের খাতায় রয়েছে ছিনতাই ও মাদকের ১০ মামলা। এসব মামলায় হাজিরাও দিতে হয়। মাদক আর মামলার খরচ জোগাড়ে ছিনতাই করেন আসিফুর রহমান (২৫)। ছিনতাইয়ের জন্য নগরের অক্সিজেন এলাকায় আসিফ বাহিনী নামে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব বাহিনী। ছিনতাইয়ের মামলায় একাধিকবার কারাগারে গেছেন। জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও জড়িয়েছেন ছিনতাইয়ে।
গত তিন মাসে দুইবার গ্রেপ্তার হয়েছেন আসিফ। সর্বশেষ ৮ জুন তিন সহযোগীসহ আসিফকে ছিনতাইয়ের মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে গত ৮ মার্চ আরেক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। মাত্র ২২ দিন কারাভোগ করে জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর আবার জড়িয়ে পড়েন ছিনতাইয়ে।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, আসিফ দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবায় আসক্ত। দিনে তাঁর চার–পাঁচটি ইয়াবা লাগে। ইয়াবা আর ১০ মামলার হাজিরার খরচ জোগাড় করতে নিজস্ব বাহিনী দিয়ে ছিনতাই করেন। এ কথা স্বীকারও করেছেন আসিফ। তাঁর অন্য সহযোগীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কুলগাঁও মাইজপাড়ার সৈয়দ ড্রাইভারের ছেলে আসিফুর রহমান। নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে আটটি। লক্ষ্মীপুর সদর থানায় রয়েছে দুটি মাদকের মামলা। নগরের অক্সিজেন মোড়, জেলা পরিষদ আবাসিক এলাকা, অক্সিজেন রেললাইন, কুলগাঁও, মাইজপাড়া, বালুচড়া, শীতলঝর্ণা আবাসিক এলাকায় নিয়মিত ছিনতাই করে আসিফ বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্য ১৫ থেকে ২০ জন। আসিফ নিজেও ছিনতাইয়ে অংশ নেন।
যেখানে ছিনতাই
নগরের অক্সিজেন মোড় থেকে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারীগামী গাড়িগুলো ছেড়ে যায়। ওই সব স্থানে যাওয়া লোকজন অক্সিজেন মোড়ে জড়ো হন। এ জন্য দিনে রাতে লোকজনের ভিড়ও থাকে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আসিফ ও তাঁর বাহিনীর লোকজন সেখানে বেশি ছিনতাই করেন। অক্সিজেন মোড় এলাকার এক দোকানদার বলেন, প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীদের অনেকে নানা ঝামেলার কারণে মামলায় যেতে চান না।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা জানান, ভুক্তভোগীরা মামলা করতে চান না। অক্সিজেন মোড় এলাকার বেশির ভাগ লোকজন দূর গন্তব্যে যাওয়ার কারণে ঘটনার শিকার হলেও পুলিশকে কিছু জানান না। পুলিশ ঘটনা শুনলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয় কিংবা ভুক্তভোগীকে খুঁজে বের করে মামলা নেয়। ওসি বলেন, ভুক্তভোগী মামলা করলে আসামি শনাক্ত করতে সহজ হয়।
দুই ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ছিনতাই
বায়েজিদ বোস্তামী থানার জেলা পরিষদ আবাসিকের পশ্চিমে রেললাইনের পাশ দিয়ে ৭ জুন ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে পোশাক কারখানায় কাজে যাওয়ার পথে জামাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে মুঠোফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। একই দিন সকাল সাড়ে সাতটার দিকে শীতলঝর্ণা আবাসিক এলাকায় প্রান্ত শর্মা ও তাঁর বন্ধু জহিরুল ইসলামকে ছুরি দেখিয়ে মুঠোফোন ও বেতনের ৩৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। এ ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে পরদিন অক্সিজেন মোড় থেকে আসিফ, তাঁর সহযোগী রবিউল হোসেন, সাকিব ব্যাপারী ও মো. রাজুকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের কাছ থেকে ছিনতাই করা মুঠোফোন ও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিকশা উদ্ধার হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজহারুল ইসলাম বলেন, আসিফ ও তাঁর সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তাঁর বাহিনীর ছিনতাইয়ে অতিষ্ঠ লোকজন। বাহিনীর সব সদস্যকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।