মোরশেদ আহম্মেদ | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহম্মেদের বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেঙ্কারি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে সরকারের গৃহীত কোনো পদক্ষেপ আলোর মুখ দেখছে না দীর্ঘদিন ধরে।

একই কর্মস্থলে প্রায় ১৩ বছরেরও অধিক সময় কাজ করার সুবাদে স্থানীয় মধ্যস্বত্বভোগীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন যুব কর্মকর্তা মোরশেদ আহম্মেদ। এ সখ্যতাকে পুঁজি করে কিছুসংখ্যক যুব মহিলা ও যুবকদের মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে আর্থিক সুযোগ নিচ্ছেন তিনি। সরকারের নির্দেশনা থাকলেও প্রশিক্ষিত যুবদের ঋণ না দিয়ে প্রকল্প ছাড়াই চল্লিশোর্ধ এক নারীকে যুব ঋণ দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন এ যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা।

এছাড়াও উপজেলা পরিষদ কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প কাজের দায়িত্ব পাওয়ার সুবাদে অর্থ বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে এ যুব কর্মকর্তাকে ঘিরে। যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহম্মেদের এসব কার্যকলাপে ক্ষুব্ধ প্রশিক্ষিত যুব সংগঠনের সদস্যরা।

উপজেলা তথ্য বাতায়নের তথ্য বলছে, ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঈশ্বরদী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে মোরশেদ আহম্মেদ কর্মস্থলে যোগদান করেছেন।

যুব উন্নয়ন ঈশ্বরদী কার্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা যায়, তিনি নিয়মিত অফিসে আসেন না, তবে মাসে দুই এক বার এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে। এছাড়াও প্রশিক্ষণ ভাতা, ঋণের টাকা আত্মসাৎ, অফিস কর্মচারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, প্রশিক্ষণ নিতে আসা যুবতী মেয়েদের সাথে সখ্যতা গড়ে কুপ্রস্তাব দেওয়াসহ নানা অভিযোগে বেশ কয়েক দফা অধিদপ্তর থেকে তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এক শিক্ষার্থীকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় মোরশেদ আহম্মেদের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের ২৪ মার্চ ওই শিক্ষার্থী তাঁর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এছাড়াও একজন নারীর সঙ্গে মোরশেদ আহম্মেদের কুপ্রস্তাবের অডিও রেকর্ডিং প্রতিবেদকদের হাতে এসেছে।

একটি সূত্রের দাবি, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে উপজেলার প্রকৃত গবাদি পশু পালনকারীদের জন্য সমন্বিত পারিবারিক খামার স্থাপন ও সম্প্রসারণ এবং বায়োগ্যাস প্রযুক্তি বিষয়ক ৫ দিনের প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করে। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী খামারিদের প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে যাতায়াত ভাড়া, ১৫০ টাকার টিফিন, ৫০ টাকা মূল্যের একটি করে খাতা, ১টি করে কলম এবং প্রশিক্ষণ শেষে ১ হাজার টাকা মূল্যের ১টি করে ব্যাগ দেয়ার কথা থাকলেও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহম্মেদ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে স্বজনপ্রীতি করে প্রকৃত খামারিদের বাদ দিয়ে তাঁর কাছের লোকদের প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিয়েছেন এবং প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের ১৫০ টাকার স্থলে নামে মাত্র ২৫ টাকা মূল্যের নিম্ন মানের টিফিন দিয়ে ১২৫ টাকা আত্মসাৎ, ৫০ টাকা মূল্যের খাতার স্থলে ১০ টাকা দামের খাতা দিয়ে ৪০ টাকা করে আত্মসাৎ এবং যাতায়াতের ভাড়া না দিয়ে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ফলে প্রকৃত খামারিরা প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং সরকারের হাজার হাজার টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন তিনি।

এদিকে মোরশেদ আহম্মেদের স্বেচ্ছাচারিতায় অফিস ছাড়তে বাধ্য হয় এক সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানিয়েছেন, আমি বদলিকৃত না, আমাকে বিতাড়িত করা হয়েছে। তিনি আরও জানালেন, প্রশিক্ষিত যুবদের প্রতিবছর ২০-২৫ জনকে ঋণ দেয়ার কথা থাকলেও কর্মকর্তার পছন্দমতো মহিলা দেখে দেখে ঋণ দেয়া হয়েছে।

সফল আত্মকর্মী মোহন ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার বেকার যুবদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিলেও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহম্মেদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে থমকে আছে যুব কার্যক্রম। প্রশিক্ষিত যুব সংসদের (প্রযুস) পক্ষে ইউএনও ও জেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উপপরিচালককে মৌখিকভাবে অবগত করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী এর প্রতিকার পাবেন।

আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের উপজেলা শাখার উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, ১৪ বছর ধরে এক ব্যক্তি এক জায়গায় চাকরি করলে তো দুর্নীতিতে জড়াবেই। তাকে সরানো দরকার।

অনিয়ম, দুর্নীতির কথা অস্বীকার করে ঈশ্বরদী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোরশেদ আহম্মেদ বলেন, এক মাস আগে ওই নারীর সাথে সমঝোতা হয়ে গেছে। বাকী সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

জেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উপপরিচালক স্বপন কুমার কর্মকার বলেন, চলতি বছরের এপ্রিলের ১৬ তারিখে উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) আব্দুল হামিদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পক্ষে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, জুলাই মাসের মধ্যে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

তিনি আরও বলেন, একজন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন এক স্থানে চাকুরি করলে নানা সমস্যা তৈরি হয়। জনস্বার্থ যেন বিঘ্নিত না হয় সে ব্যাপারে জেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।