পশুর চামড়া কাটাছেঁড়া ও বাছাই করার কাজ চলছে। শহরের রেলগেট এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদীতে কোরবানির পশুর চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। লবণের দাম বেড়ে যাওয়া ও ঈদুল আজহার পর মোকাম থেকে ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনার জন্য যোগাযোগ না করায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। অনেকে সংরক্ষণ ব্যয় বাঁচাতে চামড়া ফেলে দেওয়ার কথা চিন্তা করছেন।

৫-৬ জন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার কম দামে চামড়া সংগ্রহ করলেও ব্যয় বেড়েছে লবণে।

এবার ৫০ কেজির প্রতি বস্তা লবণে ৭০০-৮০০ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে ১৪০০-১৫০০ টাকায় কিনতে হয়েছে। আর গরুর চামড়া প্রতিটি গড়ে ৪০০-৬০০ টাকায় কিনেছে। এ চামড়া পরিবহন ও লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে আরও ৩০০ টাকা ব্যয় হয়। সব মিলিয়ে চামড়াপ্রতি খরচ হচ্ছে ৯০০-৯৫০ টাকা।

প্রক্রিয়াজাত করার পরও ট্যানারি মালিক ও বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে এখনো যোগাযোগ করেনি। সময় বাড়লে প্রক্রিয়াকরণ ব্যয়ও বাড়বে। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ী চামড়া ফেলে দেওয়ার কথা চিন্তা করছেন। যার ফলে গত বছরের মতো এবারও লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন প্রান্তিক চামড়া ব্যবসায়ীরা।
 
চামড়া ব্যবসায়ী লোকমান শিকদার বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে এলাকায় এলাকায় ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করি আমরা। এরপর লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করি। পুরো প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। তবুও আমরা দাম পাই না।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সবই বড় ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের পকেটে চলে যায়। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে যাবে।’

মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী দিপু রবিদাস বলেন, ‘একটি চামড়া এলাকা থেকে কিনে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করাসহ আমাদের প্রায় ৯০০-১০০০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু এ চামড়া যখন নাটোরসহ বিভিন্ন ট্যানারিতে নিয়ে যাই তখন দাম কম বলে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা কিছু চামড়া বাদ দেয়। নানা অজুহাত দেখায়। আবার কোরবানির ঈদ এলেই লবণের দাম বেড়ে যায়। এসব কারণে কয়েক বছর ধরে আমাদের লোকসান হচ্ছে। এবার কী হবে জানি না।’

এদিকে মাদ্রাসা শিক্ষকরা বলছেন, এতিমদের জন্য সংগ্রহ করা চামড়ারও তেমন দাম মিলছে না। কিছু চামড়া ফেলে দিয়েছেন, আর নামমাত্র মূল্যে ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এতিম শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া স্বাভাবিক রাখতে সঠিক মূল্যে চামড়া বিক্রির নিশ্চয়তা চান এ শিক্ষকরা।

শৈলপাড়া ইসহাকীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল হান্নান বলেন, ‘মাদ্রাসায় লেখাপড়া করা এতিম শিশুদের খাবার ও পোশাকের একটা বড় অংশ আসে কোরবানির পশুর চামড়া থেকে। কিন্তু গত কয়েক বছর চামড়ার দাম নেই বললেই চলে।’

তিনি বলেন, ‘এবার প্রতিটি চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০০ টাকায়। শুনলাম লবণের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছেন না।’

রেলগেট এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী হালিম বলেন, ‘উপজেলায় হাজার হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। কয়েক বছর আগেও ৩০০-৪০০ টাকা দরে ছাগলের চামড়া কিনেছি। এবার ৫০-৮০ টাকায় কিনেছি। তারপরও লোকসান হবে।’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘লবণের দাম বেড়েছে ঈদুল আজহার আগের দিন। এক সপ্তাহ হয়ে গেল এখন পর্যন্ত মোকাম থেকে চামড়ার জন্য কেউ যোগাযোগ করেনি। লবণ সিন্ডিকেটের কারণে চামড়া সংরক্ষণ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।’

ঈশ্বরদী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নাটোরসহ বড় মোকামে নিয়ে গেলে সিন্ডিকেট করে কম দামে প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া কেনেন ব্যবসায়ীরা। যার ফলে প্রতি বছর চামড়ার ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। চামড়া শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান তিনি।