একসঙ্গে এত কদম দেখে শিশুদের আনন্দ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘এ ভরা বাদলে হিয়া দোলে রে’ কিংবা ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ কথাগুলো ভাবতেই বাঙালির হৃদয়ের দ্যোতনা ভিন্নমাত্রা পায়। হারিয়ে যায় বৃষ্টিমাদলে বেজে ওঠা কোনো অলস দুপুরে। ঋতুচক্রের পরিক্রমায় সেই কাক্সিক্ষত বর্ষা হাজির হলো। আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ। কদম, কেতকী ধোয়া বৃষ্টিস্নাত দিন বাঙালির জীবনে হয়তো নিয়ে আসবে নতুন কোনো বারতা। বর্ষা মানেই নতুন করে জেগে ওঠা আর ভাবের উদয়।

সেই জোয়ারে ভাসেননি এমন কবি-সাহিত্যিক পাওয়া যায় না। শুধু যে কবি-সাহিত্যিক তা নয়-সাধারণ মানুষও। কালীদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ বা নির্মলেন্দু গুণ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে হুমায়ূন আহমেদ কেউ বর্ষাকে এড়িয়ে যেতে পারেননি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা, পদ্মা নদীর মাঝি, বিভ‚তিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী, জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে, হুমায়ূন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিনে বর্ষা এক বিপুল বিস্ময় নিয়ে আবির্ভূত।

আষাঢ় ও শ্রাবণ-দুই মাস বর্ষাকাল। আর বর্ষাকাল মানেই মেঘ, বৃষ্টি, প্রেম, নতুন প্রাণ, জেগে ওঠার গান। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ তাই তো বলেছেন, ‘এই জল ভালো লাগে;- বৃষ্টির রুপালি জল কত দিন এসে/ধুয়েছে আমার দেহ-বুলায়ে দিয়েছে চুল-চোখের উপরে/তার শান্ত স্নিগ্ধ হাত রেখে কত খেলিয়াছে,-আবেগের ভরে।’ বর্ষা আমাদের মনকে স্নিগ্ধ করে তোলে। পুরোনো জঞ্জাল ধুয়েমুছে আমরাও জেগে উঠি প্রাণচাঞ্চল্যে।

বর্ষা আমাদের জন্য অপরিহার্য এক ঋতু। বৃষ্টি না হলে শস্যাদি জন্মাবে না, বেড়ে উঠবে না প্রাণ। বৃষ্টির অভাবে মাটি যখন অনুর্বর হয়ে যায়, তখন বর্ষা এসে তা উর্বর করে। আমাদের নদী, মাঠ, ঘাটের দেশ বর্ষায় ভরে ওঠে সবুজে-শ্যামলে। বর্ষার পানিতে নদীনালা, খালবিল ভরে ওঠে। সেখানে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। তাই বর্ষা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এক পশলা বৃষ্টি যে নতুন মাত্রা নিয়ে আসে জীবনে, তা অন্য কিছুতে পাওয়া যায় না।

বর্ষায় বাংলার নদনদী পূর্ণযৌবনা হয়ে ওঠে। নদীর ফেঁপে ওঠা জোয়ারের পানি প্রচুর পলি জমায় মাটিতে, যা নিয়ে আসে শস্যের প্রাচুর্যের খবর। এ সময় বিলে-ঝিলে ফোটে শাপলা-শালুক। হিজল আর কেয়াফুলের অপরূপ দৃশ্য মোহিত করে মনকে।

বর্ষাকাল গ্রামের মানুষকে অনেক বেশি ঘরমুখো করে তোলে। রমণীরা ঘরে বসে নকশিকাঁথায় ফুল তোলেন। অনেকটা আলস্যে কেটে যায় দিন। বৃষ্টি বেশি হলে গরিব মানুষের হাতে কোনো কাজ থাকে না।

বর্ষায় ফোটে কদম ফুল, যা বর্ষার রূপকে বাড়িয়ে দেয়। আরও ফোটে কেতকী। শহরের একঘেয়ে যান্ত্রিক জীবনে বর্ষা কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে। বৃষ্টি শহরের ধুলোবালিকে বশ করে। তবে বর্ষায় শহরের রাস্তাঘাট অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়, যা মানুষের ভোগান্তি বাড়ায়। অতি বর্ষণে দেখা দেয় নদীভাঙন ও বন্যা। যা ইতোমধ্যেই দেশে দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।

বাংলার কৃষি ও অর্থনীতি বৃষ্টিনির্ভর। যথাযথ বৃষ্টিপাত ফসল ফলাতে সহায়তা করে। অন্যদিকে অনাবৃষ্টি ও খরায় কৃষি ভেঙে পড়ে। তাই বর্ষাকাল আমাদের জীবনে সামগ্রিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বর্ষা উৎসব
বর্ষা উৎসব উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ষা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়। সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। উদীচীর ঢাকা মহানগরের আয়োজনে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চেও থাকছে বর্ষা উৎসব। নাচ, গান, আবৃত্তি, বর্ষাকথন থাকবে উভয় আয়োজনে।