রোহিত শর্মা ও বাবর আজম | আইসিসি |
খেলা ডেস্ক: ‘স্পোর্টস ইজ ওয়ার, মাইনাস দ্য শুটিং।’ কথাটা লেখক জর্জ অরওয়েলের। ভারত–পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের সঙ্গে অরওয়েলের এ বিখ্যাত উক্তির অনেক মিল। দুই দলের লড়াইয়ের মাহাত্ম্য বোঝাতে প্রায়ই ‘মহারণ’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়। ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচের ক্ষেত্রে কখনোই তা বাড়াবাড়ি মনে হয় না।
রাজনৈতিক বৈরিতায় ২০১৩ সাল থেকে দুই দলের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বন্ধ। এখন দুই দলের দেখা হয় শুধু আইসিসির টুর্নামেন্ট ও এশিয়া কাপে। এমনিতেই ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। সঙ্গে যোগ হচ্ছে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের সমীকরণ। স্বাভাবিকভাবেই আজকের ম্যাচ নিয়ে পুরো ক্রিকেট–বিশ্বের আগ্রহ আকাশছোঁয়া।
দুই প্রতিবেশী দেশের ক্রিকেট যুদ্ধের মঞ্চায়ন হবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। অস্থায়ী এ স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ৩৩ হাজার। এমন মহাযজ্ঞের জন্য নিউইয়র্কের এ মাঠ যথেষ্ট হওয়ার কথা নয়। ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তানের গ্রুপ পর্বের ম্যাচ হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ৯০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার ভেন্যু মেলবোর্নের এমসিজিতে। দর্শক হয়েছিল ধারণক্ষমতার বেশি। নিউইয়র্কেও তেমন কিছুরই প্রত্যাশা। কিন্তু সবাইকে যেহেতু গ্যালারিতে জায়গা দেওয়া সম্ভব হবে না, নাসাউ কাউন্টি থেকে একটু দূরে আইজেনহাওয়ার পার্কে ব্যবস্থা করা হয়েছে বড় পর্দায় খেলা দেখার।
📸 𝗣𝗿𝗲𝗽𝘀 𝗜𝗻 𝗙𝘂𝗹𝗹 𝗦𝘄𝗶𝗻𝗴!👌 👌#TeamIndia gearing up for the #INDvPAK clash in New York 👍 👍#T20WorldCup pic.twitter.com/V9Q3qjsFEa
— BCCI (@BCCI) June 8, 2024
আজকের ম্যাচ নিয়ে অন্য দুশ্চিন্তাও আছে। গ্রুপ ‘এ’–এর এই ম্যাচে হামলার হুমকি দিয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। নাসাউ কাউন্টির পুলিশ কমিশনার প্যাট্রিক রাইডার নিশ্চিত করেছেন হুমকির বিষয়টি। তবে নিউইয়র্ক শহরের গভর্নর কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এ মুহূর্তে জনজীবনের নিরাপত্তার জন্য তেমন কোনো হুমকি নেই।’ যদিও হুমকির খবর পাওয়ার পর কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে নিউইয়র্ক গভর্নর অফিস থেকে।
মাঠের বাইরের হুমকি সামলে নিলেও নাসাউ কাউন্টি মাঠের ঝুঁকিপূর্ণ উইকেটের ভয় থেকেই যাচ্ছে। এ মাঠে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের তিনটি ম্যাচ হয়েছে, প্রথম দুই ম্যাচে রান ১০০–ও ছাড়ায়নি। সর্বশেষ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ১৩৭ রান করেছে কানাডা। অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা ড্রপ ইন উইকেটে খেলার জন্য কতটা নিরাপদ, আলোচনাও হচ্ছে এ নিয়েও। এই উইকেটের অসম বাউন্সে চোট পেয়েছেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা, আয়ারল্যান্ড ব্যাটসম্যান হ্যারি ট্যাক্টর। পাকিস্তান ম্যাচের আগে নাসাউ কাউন্টির মাঠে অনুশীলন করতে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়েছেন রোহিত। অনুশীলন নেট ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় সেখানে অনুশীলন করেনি দক্ষিণ আফ্রিকা দল। মাঠের আউটফিল্ডও ঝুঁকিপূর্ণ।
ভারতীয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে তো পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, এ মাঠে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হতে পারে না। সাবেক জিম্বাবুয়ে কিংবদন্তি অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার নিউইয়র্কের উইকেটকে ঝুঁকিপূর্ণ বলেছেন। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে আইসিসিও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। উইকেটে ঘাস রয়েছে, সঙ্গে ফাটলও। ফাটলের কারণেই অসম বাউন্স। ভারী রোলার ব্যবহার করে মাঠকর্মীরা এ ফাটল মেরামতের চেষ্টা করছেন। তাতে যদি ভয়ংকর হয়ে ওঠা নিউইয়র্কের উইকেট কিছুটা নিরাপদ হয়!
উইকেটের এমন অবস্থায়ও এ মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচ জিতেছে ভারত। অন্যদিকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তান হেরে গেছে বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে নামা স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। সুপার ওভারের রোমাঞ্চকর সে ম্যাচ হয়েছিল ডালাসে।
এত বড় অঘটনের ধাক্কা সামলে মাত্র দুই দিনের মধ্যে বাবরদের ভারতের মুখোমুখি হতে হবে এমন এক ভেন্যুতে, যেখানে এর আগে পাকিস্তান কোনো ম্যাচ খেলেনি। অন্যদিকে রোহিতরা বিশ্বকাপের শুরু থেকেই নিউইয়র্কে। এ মাঠে প্রস্তুতি ম্যাচেও বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পেয়েছে ভারত। নিউইয়র্কের জল-হাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয়রা এগিয়ে থাকবেন আজ। তবে প্রতিপক্ষ যখন পাকিস্তান, তখন সমানে সমানে টক্করই হওয়ার কথা।
পুরো ক্রিকেট–বিশ্বই আশা নিয়ে বসে আছে তেমনই এক স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচ দেখার।